সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:সাবেকি পাকিস্থানের অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।পশ্চিমী শাসকদের হাতে বাংলা ভাষা সংস্কৃতি ক্রমাগত ধর্ষিত হতো। ওপার বাংলার মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ একসময় দাবানলের মতো জ্বলে ওঠে বাঙালির হৃদয়ে।ভাষা আন্দোলন শুরু হয় অস্তিত্বের তাগিদে। বিদ্রোহ কোনোদিন ক্ষমা করেনি শাসক।পাকিস্থানের সামরিক শাসকরাও সেই ট্র্যাডিশন বজায় রাখে । সিসের বুলেট এফোড় ওফোড় করে দেয় যৌবনের দূত বরকত,সালাম, রফিক ও জব্বার দের বুক।
ভাষা রক্ষার বিদ্রোহ বিপ্লব হয়ে ওঠে। যার প্রতিক্রিয়া ঘটে ১৯৭১ এ।ভারতের সহায়তায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ জন্ম নেয়।তারপর থেকে সেই শহীদ দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারি
পালন করছেন বাংলা দেশের বাঙালিরা।১৯৯৯সালে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে দিনটির স্বীকৃতি দেয়।
এপার বাংলায় বাম জমানায় কলকাতার কার্জন পার্কে ভাষা শহীদ স্মারক সমিতির উদ্যোগে অমর ২১ শে পালন শুরু হয়।অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠনেরও উদ্যোগে পালিত হয়ে আসছে ভাষা দিবস। গত ২৩বছর ধরে একাডেমির ছাতিমতলার নিচে রাতভর ২১ শে অনুষ্ঠান পালন করছে ভাষা ও চেতনা সমিতি।এই বছর থাকবেন অসম ও বাংলাদেশের শিল্পীরা। হবে আলোচনা।বিষয় :বাংলা ও বাঙালি। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দেশপ্রিয় পার্কে গড়ে তুলেছে শহীদ স্মারক।সেখানেও অনুষ্ঠিত হয় অমর ২১ শে।কলকাতার বিড়লা তারামন্ডলের সামনেও রাজ্য সরকার ও কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে উদযাপিত হয় অমর ২১ শে।
এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্যরকম । সি এ এ আর এন আর সি আতঙ্কে এবার এপার বাংলার নাগরিক অস্তিত্ব সংকটে।তাই এবার গড়ে উঠেছে এক বিশেষ কমিটি। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সভা করে একটি কমিটি গড়া হয়েছে।২০ ও ২১তারিখে হবে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠান।২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটির পক্ষে সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন,আমরা সম্প্রীতির ডাক দিয়েছি।কারণ রফিক সালাম রা শুধু বাংলা ভাষার জন্য জন্য প্রাণ দেননি।প্রাণ দিয়েছেন মাতৃভাষা রক্ষার জন্য।এবারের ভাষা দিবস যাঁরা পালন করছেন, তাঁদের বক্তব্য হিন্দু মুসলমান নয়,আমাদের পরিচয় বাঙালি।পৃথিবীতে বহু ভাষা।কিন্তু বিশ্ব জুড়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে।বাঙালি হিসেবে ওপর বাংলার মানুষের সাথে আমরাও গর্বিত।
ইতিহাস বলছে , বাংলা ভাষার উৎপত্তি ইন্দো ইউরোপীয়ান ভাষা গোষ্ঠী থেকে। মূলত অনার্য ভাষা বাংলা ছিল গৌড়িয় প্রাকৃত ভাষা। বয়স প্রায় ৬/৭ হাজার বছর। সমীক্ষা বলছে, চিন, স্পেন, আমেরিকান যুক্তরাজ্য । এরপরই বাংলাভাষী মানুষ।পৃথিবীর প্রথম ১০ টি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা নিজের স্থান করে নিয়েছে।এই স্বীকৃতি বাঙালির বড়ই গর্বের। বড়ই অহঙ্কারের।
No comments:
Post a Comment