আজ কিন্তু মা ফিরলে আমিই দরজা খুলবো.
ঠিক আছে সোনা বলে রাতের রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল সুমনা.
টিং টং.....
কলিং বেলের আওয়াজ শুনে আজই পাওয়া মেডেলটা গলায় ঝুলিয়ে দৌড়ে এসে দরজা খুলল সৌম্য.
তোমার মা এখনো ফেরেন নি ?
না , সুমনা মাম্মা কে ডেকে দেব ?
না, ঠিক আছে , মা এলে বোলো কেবল কাকু এসেছিলো.
মনটা খারাপ হয়ে গেল সৌম্যর.
আজই যেন মায়ের বেশী দেরী হচ্ছে. বাবাই তো রাত দশটার আগে ঘরেই ঢোকে না. ঘরে ঢুকেই আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে. তার সঙ্গেও ভালো করে কথা বলে না. মাকে সে কথা বলায় মা বলেছে - তোমার বাবাই কত বড় পোষ্টে চাকরি করে কত দায়িত্ব !
সৌম্য মনে মনে ঠিক করেছে সে বড় হয়ে এরকম চাকরি করবেই না. সে সুমিতাভ স্যারের মতো শিক্ষক হবে. কি সুন্দর পড়ায় স্যার ! তাকে কত ভালোবাসে ! স্কুলের সব অনুষ্ঠানে নিজের ছেলে শুভকে নিয়ে আসে. শুভর সাথে সৌম্যর খুব বন্ধুত্ব ও হয়ে গেছে. ওর বাবাই তো আজ অবধি তাকে কোনদিন অফিসে নিয়ে যায় নি. শুধু কাজ আর কাজ. আগে তবু বছরে একবার তারা ঘুরতে যেত. এই দু বছর তো সেটাও হয় নি.
টিং টং.....
কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে আবার গলায় মেডেলটা ঝুলিয়ে দরজা খুলতে গেল সৌম্য.
কিসের মেডেল সৌম্য সোনা ?
আজ আমি রবিঠাকুরের " বীরপুরুষ " আবৃত্তি করে প্রথম হয়েছি.
কে শেখালো তোমায় ? তুমি তো বাংলা ভালো জানোই না.
সুমনা মাম্মা কে জিজ্ঞেস করো.
কি রে সুমনা ? কবে শেখালি ?
গত সপ্তাহে ক্লাব থেকে মাইকে ঘোষণা হচ্ছিলো ভাষা দিবসে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হবে. আমি তো আর ওর ইংরেজি হিন্দী পড়াতে পারিনা. বাংলাটা আমি জানি তাছাড়া " বীরপুরুষ " আমারও খুব প্রিয় কবিতা তাই আমি ওকে এটা শিখিয়েছি. ও এত সুন্দর আবৃত্তি করেছে যে আমার নিজেরও ভীষণ গর্ব হচ্ছিলো দিদি !
সত্যি সৌম্য কে এবার মাতৃভাষা টা শেখাতে হবে. ঠিক আছে আজ থেকে তুইই ওর বাংলার দিদিমনি.
হ্যাঁ মা , আমি সুমনা মাম্মার কাছেই বাংলা পড়বো. কি সুন্দর বাংলা পড়ায়. কি ভালো গল্প বলে, তোমরাও এতো ভালো গল্প বলতে পারো না - বলেই সুমনা মাম্মার গালে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে নিজের ঘরে চলে গেল সৌম্য.
সত্যি সুমনা , অনেক ভাগ্য করে তোকে পেয়েছি . আমি সৌম্যর মা হতে পারি কিন্তু তুই তার থেকেও বেশী তুই ওর মাম্মা.....
কোনদিন আমাদের ছেড়ে যাসনা সুমনা.
কি যে বলো দিদি..... কোথায় আর যাবো.... তোমরা ছাড়া আমার আর কে আছে , আমি সৌম্য সোনার মাম্মা হয়েই সারাজীবন থাকবো.
No comments:
Post a Comment