মুখোমুখি তুহিনা পাণ্ডে - Songoti

মুখোমুখি তুহিনা পাণ্ডে

Share This

সম্প্রতি ইরানি মিত্র ফ্যাশন শো’তে এলেন তুহিনা পাণ্ডে১৯৯৬ সালে কলকাতাসুন্দরী তকমা পেয়েছিলেন। করেছেন অনেক ফ্যাশন শো, কাজ করেছেন ছোট-বড় পর্দায়তবে প্রায় ২৩ বছর ব্রাত্যই ছিলেন তিনি। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন শাড়ির ডিজাইনার ফ্যাশন সম্রাজ্ঞী ইরানি মিত্রের হাত ধরে আবার আত্মপ্রকাশ। আমাদের প্রতিনিধি দেবপ্রিয় মণ্ডল কথা বললেন তার সাথে।

দেবপ্রিয়ঃ ১৯৯৪ এর পর...
তুহিনাঃ ১৯৯৬...

দেবপ্রিয়ঃ সরি, ১৯৯৬ এর পর ২০১৯, প্রায় ২৩ বছর পর কামব্যাক। এটা কিভাবে?
তুহিনাঃ কামব্যাকটা আমি বলব যে নিজের ইচ্ছা এবং মনের জোর থেকে। নাইন্টি ফাইভ থেকে নাইন্টি সেভেন, টানা তিন বছর চুটিয়ে মডেলিং করেছি, বিউটি কনটেস্টে পার্টিসিপেট করেছি, কলকাতাসুন্দরীতে ফার্স্ট রানার আপ ছিলাম, মিস বেঙ্গলে সেকেন্ড রানার আপ ছিলাম, প্রচুর শাড়ির এন্ডোর্সমেন্ট করেছি, ফুড প্রডাক্ট জলযোগ থেকে শুরু করে কাজ করেছি, টিভি সিরিয়ালে কাজ করেছি। সমস্ত কিছু করার পরে পড়াশুনোর সঙ্গে সঙ্গে; ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলাম বলে তখন ছেড়ে দিয়েছিলাম।এবার তারপরে যা হয়...মানে চাকরি করতে থাকি তারপরে বিয়ে হয়ে যায়, ছেলে হবার পরে সব বাঙালি মেয়ের মতন একটা ব্রেক নিয়েছিলাম। তারপর একটা মডেলিং ইন্সটিউটের সঙ্গে আমি যুক্ত হই এবং লাস্ট ১৪বছর ধরে আমি সেটার সঙ্গেই যুক্ত রয়েছি এবং আমার কাজই হল শয়ে শয়ে মডেলকে গ্রুম করা, তাদেরকে তৈরি করা, তাদেরকে বিউটি পেজেন্টের জন্য রেডি করা এবং এর মধ্যেই একদিন হঠাৎ মনে হয়, মানে একটি সুযোগ আসে যে মিসেস ইন্ডিয়াতে পার্টিসিপেট করা যেতে পারে। আমার মনে হল যে আরও একবার দেখি। মানে ইচ্ছেটাতো বরাবরই ছিল। সেখান থেকে হঠাৎই একদিন মনে হওয়া যে একবার কামব্যাক করলে কেমন হয়? যেটা আমি বলব সেটা হচ্ছে যে অসম্ভব মোটিভেশন পেয়েছি আমি আমার ছেলের থেকে। আমি একজন সিঙ্গেল পেরেন্ট। আমার ছেলে সবটাই গল্প শুনেছে, ছবি দেখেছে যে আমি এটা করেছি, ওটা করেছি। ও আমাকে বলে যে, “তুমি যাবে আর এটা তুমি জিতে আসবে”। এবং আবার সেভাবেই এখানে ফেরত। তো এই জন্য খুব ভাল লাগছে।
তুহিনা পান্ডে

দেবপ্রিয়ঃ এখানে বয়সটা একটা বড় ফ্যাক্টর বা ২৩ বছরে ফ্যাশন ট্রেন্ডটাও বদলেছে অনেক। সেখানে কোনও সমস্যা হয়নি?
তুহিনাঃ না। সেটার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়নি, কারণ মিসেস ইন্ডিয়াতে প্রথমত হচ্ছে যে এজ ক্রাইটেরিয়াটা অনেকটা লেংদি, মানে ফর্টি ফাইভ ইয়ার্স পর্যন্ত রেঞ্জটাই থাকে। আমি ডেফিনিটলি তার মধ্যেই। আর সেখানে সাংঘাতিক ফিগারটাকেই ক্রাইটেরিয়া বলে মানা হয় সেটা কিন্তু নয় কারন পুরোটাই হচ্ছে যে একজন এই বয়সে চল্লিশোর্ধ মহিলা অথবা পঁয়ত্রিশোর্ধ মহিলা, তিনি কিন্তু জীবনে অনেক কিছু অ্যাচিভ করে ফেলেছেন শুধু তার সৌন্দর্য্যটা কিন্তু শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নয়, তার মনের সৌন্দর্য্য এবং নিজেকে পরিচালনা করা, তার শিক্ষা, বিদ্যা, তার এক্সপিরিয়েন্স সবটা মিলেই কিন্তু সে মিসেস ইন্ডিয়া। মিসেস মানে একজন মাকে যে রিপ্রেজেন্ট করছে তার তো শুধুমাত্র বাহ্যিক রূপটাই ইম্পর্ট্যান্ট নয়। এই জন্যই কখনোই সেটা অসুবিধা হয়নি।


দেবপ্রিয়ঃ ম্যাম, ইরানি মিত্রের স্টুডিওতে এসে আপনার কেমন লাগছে?
তুহিনাঃ খুব ভাল লাগছে। প্রথম হচ্ছে যে আমার ফিরে আসার পরে আমার টাইমলেস বিউটি মিসেস ইন্ডিয়া ২০১৯ জিতে আসার পরে এটা আমার ফার্স্ট ডিজাইনার এন্ডোর্সমেন্ট। ওনার কালেকশন পরে আজকে আমি শুটটা করছি। ওনার কালেকশন অপূর্ব কালেকশন। মানে শুধুমাত্র যে আমি ওনার জন্য শুট করছি বলে এটা বলছি না। আমি অনেক ডিজাইনারের সঙ্গে কাজ করেছি, অনেকের কালেকশন দেখেছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হয় একইরকমের ফেব্রিক বা একইরকমের কালার। মানে সিঙ্গেল প্যাটার্নের উপরে অন্যরা কাজ করেন। ওনার ক্ষেত্রে কিন্তু ভার্সেটাইল কালেকশন ওনাদের, আমার যেটা মনে হয়েছে। যে রকম ওয়েস্টার্ন ওয়্যারও রয়েছে, সেরকম মিক্স এন্ড ম্যাচ করে পরার মত ওয়েস্টার্নের সঙ্গে একটা শাল নিয়েও পরা যাবে। সেটা বিয়েবাড়িতেও পরা যেতে পারে। অপূর্ব শাড়ি রয়েছে মানে রেডিমেড শাড়ি। আবার লেহেঙ্গাও রয়েছে আবার খুব স্মার্ট দেখতে লেহেঙ্গাও রয়েছে আবার খুব গর্জাস লেহেঙ্গাও রয়েছে যেটা হয়তো ফেস্টিভ্যালে পরা যায়। এবং খুব সুন্দর কাট। একএকটার এক এক রকমের ডিজাইন নয়, কাটগুলোও খুব ইন্টারেস্টিং। পরলেই খুব ভাল লাগবে।

দেবপ্রিয়ঃ ইরানি মিত্রতে এসে কোনো বিষয়টাকে খুব ইউনিক মনে হয়েছে? যে এটা কোনো অন্য ডিজাইনারের কাছে নেই?
তুহিনাঃ হ্যাঁ। আমার মনে হয়েছে কাটটা খুব ইউনিক। হয়তো ফ্লেয়ারি একটা জিনিষ, তার সঙ্গে স্লিভ যেটা করা হয়েছে সেটা একদম অন্যরকম। ব্লাউজের সঙ্গে হাতাটা একদম অ্যাবসলিউটলি আমার একটা (ড্রেস) পরে ছবি ছিল। একটা ফুল স্লিভ ব্লাউজ, সেটা পুরোটা স্লিট করা। সেটা যেকোনো সময় হাত তুললে মানে যে কাজ সেটা খুব স্টাইলিশ লাগবে দেখতে। মানে ডিজাইনগুলো খুব ভাল, খুব ইন্টারেস্টিং এবং খুব স্টাইলিশ। যেটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।

ডিসাইনার ইরানি মিত্র ও তুহিনা পান্ডে
দেবপ্রিয়ঃ এখানে এসে কি দেখছেন যে পুরনো নতুন দুইরকম স্টাইলই রয়েছে নাকি শুধু পুরনো বা শুধু নতুনই রয়েছে। কি মনে হচ্ছে?
তুহিনাঃ না। দুটোর কম্বিনেশনই আছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গতানুগতিকতার বাইরে গিয়েই কিন্তু উনি করেছেন। সেটাই ওনার চয়েস বা সেটাই ওনার ইউএসপি বলে আমার মনে হল কালেকশন দেখে। উনি গামছা, মানে এখন গামছাটা তো খুব ট্রেন্ডে। এবার উনি গামছা ইউজ করেছেন কিন্তু একদম অন্যরকম ভাবে ইউজ। বা উনি বেনারসী ইউজ করেছেন, সেটা তো আমাদের খুব অথেন্টিক একটা জিনিস, বিয়ে... বিয়েবাড়ি বেনারসী ছাড়া ভাবা যায় না। সেই বেনারসীটা যে উনি ইউজ করেছেন, ওটার সঙ্গে উনি একটা টু শেডস, মানে লেসকে উনি মার্জ করেছেন। সেটা খুব ইউনিক এবং এটা অ্যাবসলিউটলি ওনার স্টাইল, ওনার নিজস্বতা, আমার মনে হয়েছে যে ইন্ডিভিজুয়ালিটি।

দেবপ্রিয়ঃ অনেক সময় এই ইন্ডিভিজুয়ালিটিটা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক ডিজাইনারের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শুধু ফ্যাশন শোতেই বা র‍্যাম্পেই সেই ড্রেসটা পরা যাবে। এব্যাপারে কিছু বলবেন?
তুহিনাঃ অবশ্যই সেটাও আমি বলব যে ওনার যে কালেকশন সেটা পরে কিন্তু যেকোনো পার্টিতে ঘুরে আসা যাবে, যেকোনো বিয়েবাড়িতে যাওয়া যাবে এবং সেরকম হলে আমার খুব ভাল লেগেছে একটা ব্লেজার সেটা চাইলে অফিসের যদি কোনো পার্টি থাকে মানে কর্পোরেট পার্টিতেও কিন্তু সেটা পরে যাওয়া যাবে। একটা ফর্মাল ট্রাউজার এবং ভেতরে একটা ফর্মাল শার্ট দিয়েও ওই ব্লেজারটা যদি কেউ পরে নেয়, মানে শুধুমাত্র ইউনিক বলে তা না, অ্যাবসলিউটলি মাইন্ড ব্লোয়িং তাকে লাগবে। সেক্ষেত্রে ডিজাইনারের আমি বলব সাংঘাতিক অ্যাচিভমেন্ট। দুটোর মেলবন্ধন এবং কন্টেপোরারি ওম্যানের জন্য। কারণ আজকের নারীর ভাবনাচিন্তাটা একদমই আলাদা, সেটার সঙ্গে অ্যাড পার্ট একেবারে।

দেবপ্রিয়ঃ ম্যাম, সৌন্দর্য্য বলতে সাধারণ মানুষ যেটা বোঝে, যে তাকে দেখতে সুন্দর হতে হবে, ফর্সা হতে হবে। কিন্তু সবাই তো সেরকমটা নয়। এটাকে কিভাবে বলবেন?
তুহিনাঃ আমি যেটা বলব এবং আগেও বলেছি আর সবসময় বলি যে বাহ্যিক সৌন্দর্য্য কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মনের সৌন্দর্য্যটা সারাজীবনই রয়ে যায়। যার খুব সুন্দর মন আছে, যে খুব প্রাণ খুলে হাসতে পারে, যে মানুষকে ভালবাসা দিতে পারে তারা সারাজীবন সুন্দর থাকে। আর প্রত্যেকটা মানুষের সৌন্দর্য্য কিন্তু ডিপেন্ড করে সে কিভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করছে। তার গায়ের রঙ যাই হোক না কেন, চোখের বা নাকের নকশা যেমনই হোক না কেন, তার যদি সুন্দর ব্যবহার থাকে, সে যদি যেকোনো পোষাকে সাবলীল ভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারে এবনগ তার সুন্দর ব্যবহার দেখিয়ে যদি সে সকলের সাথে মিশে যেতে পারে, তবে তার থেকে বেশি সুন্দর বোধহয় আর কোথাও নেই।

দেবপ্রিয়ঃ শুনেছি বম্বেতে একসময় আপনি আর বিপাশা বসু এই দুজনই মডেল ছিলেন। এই ব্যাপারে যদি কিছু বলেন।
তুহিনাঃ না। বম্বেতে না। বম্বেতে মোনাপালি নাম করা ডিজাইনার। ওনাদের ফার্স্ট হোয়াইট কালেকশন, সেটা এখানে লঞ্চ হয়েছিল। সেখানে সমস্ত বম্বের মডেল এসেছিলেন যেখান থেকে দুজন মডেল সিলেক্ট করা হয়েছিল। একজন বিপাশা বসু, আর একজন আমি। তার কারণই ছিল যে গায়ের রঙ শ্যামলা ছিল। ওদের ওইটাই ক্রাইটেরিয়া ছিল। কারণ কালো মেয়েকে সাদা পরলে সব থেকে ভাল লাগে। আমার সেখানে সৌভাগ্য হয়েছিল।

দেবপ্রিয়ঃ সমাজে অনেক প্রান্তিক মানুষজনও ডিজাইন করেন। অনেকসময় দেখা যায় তাদের ডিজাইনটা ট্রেন্ডে আসার মত কিন্তু আসছে না। এই প্রসঙ্গে যদি বলেন।
তুহিনাঃ এটা অনেকের দায়িত্ব থাকে। আমাদের যা কালচার, যা যা হেরিটেজ যেমন ওয়েস্ট বেঙ্গলের হ্যান্ডলুম হোক বা তাঁত হোক সব কিছু নিয়েই কিন্তু সেইভাবে কাজই হয়নি। আমাদের যাঁরা তাঁতিরা আছেন, তাঁরা এত সুন্দর জিনিষ বানাতে পারেন, তাঁদের কিন্তু হাইলাইট করার দায়িত্ব অনেকটা আমরা নিতে পারি। এবং আমার ফেরত আসা অনেকটা এই কারণে যে যারা সেই প্রিভিলেজটা পায় না, যাদের নিয়ে কেউ ভাবে না, তাদের জন্য যদি একটু কিছু করতে পারি তবে সেটা আমি নিশ্চয়ই চাইব। তবে মিডিয়ার অনেকটা রোল থাকে বলে আমার মনে হয় যে, ছোট ছোট জায়গা থেকে ট্যালেন্ট তুলে আনা। সেটা যদি করা যায় নিশ্চয়ই খুব ভাল লাগবে।

Advertisement


দেবপ্রিয়ঃ এরপর কি এরকম ফ্যাশন শো তে প্রায়ই দেখা যাবে আপনাকে?
তুহিনাঃ হ্যাঁ। নিশ্চয়ই দেখা যাবে। প্রচুর ফ্যাশন শো তে এবং যতগুলো বিউটি কনটেস্টে আমি রয়েছি, মানে অনেকগুলোতেই রয়েছি। সেখানে অ্যাস আ মেন গ্রুমার মডেলদের তৈরী করা, কোরিওগ্রাফি করা থেকে শুরু করে সব সেই দায়িত্বেও থাকব এবং সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই নিজেও র‍্যাম্পে হাঁটব। (হাসি)

দেবপ্রিয়ঃ যারা সুযোগ পাচ্ছে না, কিন্তু মডেল হতে চায় তাদের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?
তুহিনাঃ হ্যাঁ, তাদের জন্যই কিন্তু বিউটি কনটেস্টগুলো। কারণ বিউটি কনটেস্টগুলোতে কিন্তু তাদের সেই গ্রুমিংটা করিয়ে দেওয়া হয় যে তারা কিভাবে হাঁটবে, কিভাবে দাঁড়াবে, কিভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করবে। সেখান থেকে কিন্তু তারা মডেলিং এরিনাতে আসতেই পারে। এবং মডেলিংএর দুনিয়াটা এমন একটা দুনিয়া সেখানে কিন্তু শুধুমাত্র গায়ের রঙটা বা শুধুমাত্র একটা জিনিষ নিয়ে সেটা বিচার হয় না। পুরো টোটালিটিতে একটা জিনিষ থাকলে যেমন হয়তো খুব কনফিডেন্ট বা হয়তো খুব কথা বলতে পারে অথচ তার হাইটটা কম, আবার কেউ হয়তো খুব লম্বা কিন্তু তার হয়তো সেই সাংঘাতিক নাতো গায়ের রঙ আছে, নাতো সেই গ্ল্যামারটা আছে। সবাইকে নিয়ে কিন্তু এই দুনিয়াটাতে কাজ করা যায় না। যেটা হয়তো অ্যাক্টিংএর ক্ষেত্রে স্কোপটা কম।

No comments:

Post a Comment