দেবপ্রিয় মণ্ডল, কলকাতাঃ প্রস্টেটের রোগগুলি অধিকাংশ বয়স্কপুরুষদের মধ্যেই দেখা যায়। বেশিরভাগ সমস্যার কারণ হিসাবে কেউ আবহাওয়ার পরিবর্তন, কেউ বা জল, কেউ বা বার্ধক্যকে দোষ দিচ্ছেন। কিন্তু বর্তমান জীবনযাত্রায় সময়ের সাথে সাথে মুছে যাচ্ছে বয়সের বিভাজন। প্রস্টেট বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। ‘বেনিং প্রস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া’ (বি.পি.এইচ.) এমন একটি রোগ যা শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই মূত্রনালীকে এতটাই ফুলিয়ে তোলে যে খালি চোখেই তা দেখা যায়। সাধারণত এটা ৩০বছর বয়সে ৮% ক্ষেত্রে ৪০বছরে, ৫০% ক্ষেত্রে ৬০বছর বয়সে এবং ৯০% ক্ষেত্রে ৯০বছর বয়সে শুরু হয়। এই রোগীদের অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ। ভারতে প্রতি ৫ জনে ১ জন পুরুষ মূত্রনালীর সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডাক্তার দেখানো হয় না। ধরে নেওয়া হয় এগুলি বয়সজনিত কারনে হচ্ছে, এবং যখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় ততদিনে রোগ জটিল আকার ধারণ করেছে।
বয়সের সাথে সাথে প্রস্টেট দুবার বৃদ্ধি পায়। বয়ঃসন্ধিকালে প্রস্টেট আকারে দ্বিগুণ হয় এবং ২৫ বছর বয়সের পর আবার একবার প্রস্টেট বর্ধিত হয়। রোগের সম্ভবনা থাকে এই দ্বিতীয় সময়টিতেই। রোগীরা ঘন ঘন প্রসাবের ও প্রসাবের অসুবিধার অভিযোগ করেন। এই রোগে মুত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হয় না, ফলে বিঘ্ন ঘটে জীবনযাত্রার মানে। রোগী বার বার প্রসাবে যান এবং মূত্রত্যাগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে থাকেন। তবে মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত বড় প্রস্টেট মানেই জটিল রোগ নয়। দেখা গেছে বেশি সমস্যা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে রোগের প্রভাব কম থাকে, অন্যদিকে কখনও বা রোগ জটিল হলেও উপসর্গ থাকে যৎসামান্য। তবে সময়মত চিকিৎসা না করালে ফল হতে পারে মারাত্মক। মূত্রনালী সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে প্রস্টেট ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। লক্ষনীয়, বি.পি.এইচ. এর লক্ষণগুলি প্রস্টেট ক্যান্সারের মতই। ড. অমিত আগরওয়ালের কথায়, “এই রোগীরা সাধারনত বেশি দূরে বেড়াতে যান না। গেলেও সব সময় টয়লেটের কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করেন। এরা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েন এবং সমস্যার কথা কাউকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না”। শারীরিক, রেডিওগ্রাফিক পরীক্ষা এবং কয়েকটি ল্যাব পরীক্ষার দ্বারা বিপিএইচ রোগ নির্ণয় করা হয়। শারীরিক পরীক্ষায় ডিআরই (ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা) গুরুত্বপূর্ণ যা ইউরোলজিস্ট দ্বারা প্রস্টেটের শারীরিক পরীক্ষার সাথে জড়িত। আল্ট্রাসাউন্ড পেট এবং শ্রোণী ছাড়াও প্রস্টেট গ্রন্থির আকার নির্দেশ করে। ল্যাব পরীক্ষার মধ্যে পিএসএ (প্রস্টেট-নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন) অন্তর্ভুক্ত। পিএসএ একটি প্রোটিন যা কেবল প্রস্টেট থেকে তৈরি হয়। প্রস্টেট ঠিক থাকলে রক্তে খুব কম পিএসএ পাওয়া যায়। তবে প্রস্টেট ডিজিজ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব। সারা বিশ্বে সেপ্টেম্বর মাসকে প্রস্টেট স্বাস্থ্য মাস পালন করা হয়। এটি পুরুষদের স্বাস্থ্যসচেতনতা সৃষ্টির একটি আন্দোলন”। এই আন্দোলন সফল হলেই কমবে রোগীর সংখ্যা, অভিমত ডাক্তারদের।
No comments:
Post a Comment