ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি’র বাৎসরিক সম্মেলন শহরে - Songoti

ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি’র বাৎসরিক সম্মেলন শহরে

Share This

পল্লবী ব্যানার্জী, কলকাতাঃ হৃদ ছন্দের ব্যাঘাত কে মাঝে মাঝে অ্যারিদমিয়া বলা হয়। অ্যারিদমিয়া হল অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন। এই ব্যাঘাত হৃদয় এর ইলেকট্রিকাল সিগনাল নষ্ট করে দেয় এবং হৃদ স্পন্দন এর গতি খুব বাড়িয়ে দেয়, খুব কমিয়ে দেয় অথবা অস্বাভাবিক করে দেয়। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ এই হৃদ গতি জনিত রোগে ভুগছে।।

ভ্রমন এর সময়, অনেক মানুষ সঙ্গে সঙ্গে মারা যান আবার কেউ কেউ হাল্কা প্রসারের ফলেই ভেঙ্গে পরেন। অনেক রিপোর্ট রয়েছে যেখানে দেখা গেছে তরুন খেলোয়াড় মাঠে হঠাৎ ই মারা যান। এগুলি সব ই অ্যারিদমিয়া এর ফলে হয়ে থাকে। একটি গবেষণা পত্রে দেখা গেছে প্রতি ১৮ জন এর ১ জন এরকম হৃদ রোগের শিকার। এই সংখ্যা আর বৃদ্ধি পায় জখন তারা আর অন্যান্য হৃদরোগেও ভুগছেন যেমন Ischaemic হৃদরোগ, হার্ট ভাল্ভ জনিত রোগ বা হৃদ পেশি জনিত রোগ। আমেরিকা তে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এই অ্যারিদমিয়া এর জন্য হঠাৎ ই অসুস্থ হয়ে পরেন। হৃদ অ্যারিদমিয়া আমাদের সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।।
ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি ২০১৯ সালে তাদের বার্ষিক সম্মেলন এর আয়োজন করেছে কলকাতা এ। Dr. রবিন চক্রবর্তী, ISECON 2019 এর অরগানাইজিং সেক্রেটারি বলেছেন যে এই সম্মেলনে সারা ভারতের হার্ট এবং ই সি জি বিশেষজ্ঞ রা কিভাবে ই সি জি এর মাধ্যমে এমন হৃদরোগ যা মৃত্যুর কারন হতে পারে তা নির্ণয় করার উপায় এর উপর কথা বলবেন। এই আড়াই দিন এর সম্মেলন এ কিভাবে সরলতর পরীক্ষা ই সি জি খুব বড় কোন হৃদ সমস্যা নির্ণয় করতে পারে এবং যার থেকে বড় হার্ট অ্যাটাক এর চিকিৎসা জানা যেতে পারে, সেই নিয়ে সারা দেশ এর ফিজিশিয়ান রা কথা বলবেন বলে Dr. চক্রবর্তী জানিয়েছেন। হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ এর জন্য অনেক উন্নত টেকনোলজি, হঠাৎ মৃত্যু প্রতিরোধ, রেডিও কম্পন অপসারন, পেসমেকার এর পর্যবেক্ষণ বাড়িতেই এবং পেসমেকার ইন্সটল করার পদ্ধতি নিয়ে ইলেক্ট্রোফিসিওলজিস্ট রা আলোচনা করবেন। রোবট সাহায্যকারী পদ্ধতি তে  হৃদ স্পন্দন ব্যবস্থাপনা নিয়ে ও আলোচনা হবে।।
যাদের ঘুমানোর সময় নাক ডাকার বাজে অভ্যাস আছে তাদের জন্য কিভাবে মারাত্মক অ্যারিদমিয়া হঠাৎ মৃত্যুর কারন হতে পারে তার উপর বিশেষ সেশন আছে। কিভাবে এই জটিলতা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি’র প্রতিষ্ঠা সদস্য এবং মুখ্য অধ্যাপক Dr. এস বি গুপ্ত।।
হৃদ স্পন্দন ঘটিত রোগ অকাল মৃত্যুর কারন। কিন্তু আজ কার্ডিয়াক ইলেক্ট্রোফিজিওলজি এবং বেতার কম্পন অপসারন এর মত উন্নত টেকনোলজি এর জন্য চিকিৎসা খুব বেশি ব্যয়বহুল নয়। কিন্তু আমাদের দেশ এ গুরুত্বপূর্ণ কার্ডিয়াক ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট বা হৃদ স্পন্দন বিশেষজ্ঞ এর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতাল এই কার্ডিয়াক ইলেক্ট্রোফিজিওলজি এবং বেতার কম্পন অপসারন এর সুবিধা নেই। ফিজিসিয়ান দের মধ্যে ই সি জি এবং হৃদ স্পন্দন এর জ্ঞান এবং বোধশক্তি অনেক বেশি পরিমানে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।।
অন্যথায় স্বাভাবিক মানুষের রাস্তায় হঠাৎ ধসে পড়ার সাধারন কারন হৃদ স্পন্দন জনিত রোগ বা হার্ট এর ইলেকট্রিকাল সার্কিট এ সমস্যা। এইরকম দুর্ভাগ্য জনিত ঘটনা যা তরুণদের অসাময়িক মৃত্যু ডেকে আনে তা এড়ানো সম্ভব যদি সবাই কে বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা গুলি বোঝানো যায়।
পশ্চিমের দেশগুলিতে এয়ারপোর্ট, রেল স্টেশন এর মত বিভিন্ন ব্যাস্ত জায়গা গুলিতে যেখানে বিপুল সংখ্যায় মানুষ জড়ো হয় সেখানে অটোমেটেড ইলেকট্রিকাল ডিফারব্রিলেটর (এ ই ডি) অনেক প্রান বাঁচাতে পারে। এই সম্মেলনে বিভিন্ন ধরনের সাধারন মানুষ কে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ওয়ার্কশপ এর ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। চিরঞ্জিব হৃদয় প্রকল্প টীম এবং  ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি একত্রে এই ২ ঘণ্টা ব্যাপি প্রাথমিক লাইফ সাপোর্ট এবং কারডিওপুলমনারি উজ্জীবন এর ‘হ্যান্ডস অন’ ওয়ার্কশপ এর উদ্যোগ নিয়েছিল যার নাম পারসনাল এম্পয়াওয়ারমেন্ট অফ ইমারজেন্সি রেসপন্স (পি ই ই আর) এই সম্মেলনে বলেছেন মুম্বাই এর জেনারাল সোসাইটি সেক্রেটারি  Dr. আশিস নাবার। প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ইলেক্ট্রো কার্ডিওলজি বেঙ্গালোর এর  Dr.জয়প্রকাশ এস জোর দিয়ে বলেছেন হৃদ স্পন্দনের প্রাথমিক শিক্ষা এবং বোঝাপড়া তিব্র ব্যবস্থাপনা অনেক প্রান বাঁচাতে পারে। হার্ট অ্যাটাক রোগী দের জন্য মেডিকেল এডুকেশান মৌলিক প্রশিক্ষণ এর স্নাতক এবং স্নাতকত্তর কার্যাবলী খুব ই গুরুত্বপূর্ণ। একই রকম ভাবে নার্স, টেকনিশিয়ান, আ্যমবুলান্স টীম এর সকলের ও ই সি জি সম্পর্কে জানা খুব দরকারি। প্রেসিডেন্ট ওরিয়েন্টেসন এ Dr.জয়প্রকাশ এস অকালমৃত্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।বেঙ্গালোর এর ইন্সিটিউট অফ কার্ডোভাসকিউলার এর Dr.জয়প্রকাশ  তাঁর নিজস্ব জ্ঞান থেকে তার প্রতিনিধি দের রক্তচাপ এর নিন্মতা হেতু সাময়িক সংজ্ঞা হীনতার কারনে হৃদ স্পন্দনের রোগ ও তার চিকিৎসা নিয়ে বলবেন।
সারা ভারতের প্রায় ৫৫০ জন ডাক্তার এই সম্মেলন এ উপস্থিত থাকবেন। এছারাও থাকবেন প্রায় ১০০ জন নার্স, টেকনিশিয়ান, এবং প্যারামেডিক্যাল স্টাফ।।
এই সম্মেলন এ প্রায় ১৫ টি প্র্যাক্টিক্যাল একাডেমিক সেশান এবং একটি ২ ঘণ্টার ‘হ্যান্ডস অন’ ওয়ার্কশপ হয়েছে। মেডিক্যাল এডুকেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ  ইউনিভার্সিটি এর ডিরেক্টর Dr. প্রদিপ মিত্র এই সম্মেলন এ প্রধান অতিথি দের একজন ছিলেন। ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ইউনিভার্সিটি’র প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলার Dr. ভবতশ বিশ্বাস, মাউলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি’র ভাইস চ্যান্সেলার Dr. তপতি দত্ত, ডিন অফ সাইন্স অ্যান্ড প্রফেসর অফ ফিজিক্স অ এই সম্মেলনের বিশিষ্ট অতিথি ছিলেন। আমরা আশা করছি এই সম্মেলন সাধারন মানুষের জ্ঞান আলকিত করতে পারবে। এই ধরনের সম্মেলন এই লক্ষে পৌঁছানোর একটি ধা।।

No comments:

Post a Comment