কলকাতা: আপনি কী এমন কাউকে চেনেন, যিনি দুধ খাওয়ার পরেই গা গোলানো, বমি বমি ভাব বা পেট ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যার অভিযোগ করেন? এগুলি ল্যাকটোজ সহ্য না করতে পারার কারণ হতে পারে — এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনও মানুষের শরীর ল্যাকটেজ (যা বিটা-গ্যালাকটোসিডেস নামেও পরিচিত) উৎপাদন করা বন্ধ করে দেয় বা প্রয়োজনের তুলনায় কম উৎপাদন করে। এই ল্যাকটেজ হল এমন একটি উৎসেচক যা দুধের মধ্যে উপস্থিত থাকা প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট—ল্যাকটোজ হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এটি দুধ বা দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার পরে বিপাকক্রিয়ায় বাধা সৃষ্ট করতে পারে।
সার্ভেটির নাম ছিল ‘ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স — কলকাতা ইন্সিডেন্স’। যেটির মাধ্যমে কলকাতায় ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা এবং বিভিন্ন মাত্রার নিরিখে তাঁদের প্রোফাইলগুলি পর্যালোচনা করে একটি সামগ্রিক পরিসংখ্যানের রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। এই মোবাইল-ভিত্তিক অনলাইন সমীক্ষাতে পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে যে কলকাতার প্রতি ৩টি পরিবারের মধ্যে ১টি পরিবারের অন্তত ১ জন সদস্য বিশ্বাস করেন যে তাঁরা কোনওভাবেই ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না।
সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিরা ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারেন না বলে বিশ্বাস করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ার পরেই বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়। ঠিক এই কারণেই এদের মধ্যে ৩১ শতাংশ পরিবার দুধ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে বা বন্ধ করে দিয়েছে। স্বভাবতই, খাদ্য তালিকা থেকে দুধ বাদ যাওয়ার প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যেও। পরিসংখ্যান বলছে, এদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি, ভিটামিনের ঘাটতি ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছেন। অনেকের ক্ষেত্রে হাড়ের সমস্যাও দেখা গিয়েছে। একটি বড় সংখ্যক মানুষ (ল্যাকটোজ সহ্য করতে পারে না এমন পরিবারের ৭০ শতাংশ) এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এবং তাঁদের মধ্যে ৩৯ শতাংশই দুধের বিকল্প খুঁজে বের করতে বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ল্যাকটোজ সহ্য করতে না পারার এই সমস্যা সমস্ত বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, তাদের অভিভাবকদের উদ্বেগ অনেকটা বেড়ে যায়। কারণ কম দুধ খাওয়ার ফলে শিশুদের শরীরে স্বাভাবিক পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যা তাদের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, তাঁরা সাধারণত দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন বা কমিয়ে দেন। এবং তাঁদের স্বাস্থ্য অনুযায়ী অন্যান্য বিকল্পের সাহায্য নেন। এই বিকল্পের মধ্যে রয়েছে হয় ল্যাকটোজ মুক্ত দুধ বা উদ্ভিদ ভিত্তিক দুধ। এই দুই বিকল্পই কিন্তু নিয়মিত বাজারচলতি দুধের পাউচ প্যাকেটের থেকে অনেকটাই দামি। এবং সহজে পাওয়া যায় না।
কলকাতায় দুধের কারণে বদহজমের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা নিয়মিত কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, তা বুঝতেই দ্য ক্রাউনইট সমীক্ষাটি চালানো হয়।
No comments:
Post a Comment