মমতার হ্যাট্রিক,শপথ নিলেন রাজভবনে - Songoti

মমতার হ্যাট্রিক,শপথ নিলেন রাজভবনে

Share This

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বুধবার। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল দশটা পঁয়তাল্লিশ মিনিট। কোভিড বিধি মেনে কলকাতার রাজ ভবনে মাত্র পঞ্চাশ জন আমন্ত্রিত দের সামনে রাজ্যপালের কাছে তৃতীয়বারের জন্য পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিলেন বাংলার মেয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়। বিজেপির চক্ষুশূল ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিসহ তৃণমূলের সব স্তরের নেতা আর উৎসাহী কর্মীরা বলেই রেখেছিলেন, 'যতই নাড়ো কল কাঠি নবান্নে আবার হাওয়াই চটি।' অন্যদিকে তৃণমূলের ভোটকুশলী পি কেও বলে রেখেছিলেন, বিজেপি দুই অঙ্ক পেরোবে না। সেটাই ঘটলো। বিজেপির 'উনিশে হাফ, একুশে সাফ' শ্লোগান স্রেফ ছেলে ভুলানো ছড়া হয়েই থেকে গেল।

    গতবারের চেয়েও বেশি আসন নিয়ে দিদির প্রত্যাবর্তন অনেকের কাছে সন্দেহ থাকলেও এই প্রতিবেদকও আগাম বলেছিল, তৃণমূল১৮০আসন পাচ্ছেই। সংযুক্ত মোর্চার জন্য ধরেছিলাম তিরিশ থেকে পঞ্চাশ।হিসেবমত সেই আসন তৃণমূল পেয়েছে। অর্থাৎ বিজেপিবিরোধী ভোট মনে করেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোট ভাগ হওয়া রুখতে তৃণমূলকেই সমর্থন দিতে হবে।সেটাই হয়েছে।

     ইতিমধ্যেই বিজেপির একাংশ নিজেদের দুর্বলতা নিয়ে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। রাজ্য নেতৃত্ব তাই নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে৩৫৬ধারা প্রয়োগ , রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে গুঞ্জন শুরু করেছেন। যদিও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব সেই বোকামি করে মমতা ব্যানার্জি কে শহীদ হতে দেবেন না। কেননা ২০২৪লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীদের এককাট্টা হওয়ার সুযোগ তাঁরা দিতে চান না।
     হ্যাঁ এটা সত্যি,বিতর্ক থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী মমতা বন্দোপাধ্যায় নন্দীগ্রামে  সামান্য ভোটে হলেও হেরে গেছেন একদা পুত্রসম শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। অর্থাৎ আজ মমতা শপথ নিলেন বিধায়ক নির্বাচিত না হয়েও।আগামী ছ'মাসের মধ্যে তাঁকে উপনির্বাচনে কোনও আসন থেকে জিতে আসতে হবে। বলাই যেতে পারে, মমতার জিতে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা।

এবারই প্রথম নয়।২০১১ সালেও মমতা ব্যানার্জি  বিধায়ক না হয়েও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন।সেবার ভবানীপুর কেন্দ্রে জিতে এসেছিলেন মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক সুব্রত বকসী।তিনি আসনটি ছেড়ে দেন।উপনির্বাচনে জিতে আসেন মমতা।
ভারতের ইতিহাসে এমন বহুবার হয়েছে। উত্তরাখণ্ডের বিধানসভার নির্বাচনে ২০১৭ সালে হেরে যান বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী তির্থ সিং রাওয়াত। জয়রাম ঠাকুরকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়।১৯৭০ এ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভুবন নারায়ণ সিংও হেরে যান।উপনির্বাচনে পরে জিতে আসেন। ২০০৯ এ উপ নির্বাচনেও হেরে যান শিবু সরেন। সেবার অবশ্য রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু হয়।

স্বাধীনতার পরে ১৯৫২ সালে তৎকালীন মহারাষ্ট্র ও গুজরাট পরিচিত ছিল 'স্টেট অফ বম্বে' নামে।নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোরারজি দেশাই হেরে যান। উপনির্বাচনে সি রাজাগোপালাচারীকে জিতিয়ে এনে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। বাংলায় সেই সমস্যা নেই। যতদূর মনে হয় নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ যাবে আদালতে।সেখানে কি রায় হয় সেটাই দেখার।তবে নৈতিক হার যদি হয়, সেটা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি বলেছিলেন হাফ লাখ ভোটে বেগম(আগে অবশ্য মা বলতেন) মমতাকে না হারালে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। বিজেপি নেতৃত্ব মুকুল রায় আর শুভেন্দুকে তুরুপের তাস মনে করেছিলেন। ভোটের ফল বলছে, তাঁরা মাও সেং তুংয়ের কথামত কাগুজে বাঘ ।
   অন্যদিকে সংযুক্ত মোর্চার নবীন প্রজন্ম না জিতলেও ২০১৯এর তুলনায় স্ব স্ব কেন্দ্রে ভোট বাড়িয়েছেন। সামগ্রিক হিসেবে ভোটের ফল বামেদের খারাপ হলেও আগামীদিনে নবীন প্রজন্মই আবার বামেদের শক্তি বাড়িয়ে তুলবে। মুখ্যমন্ত্রী ও ব্রাত্য বসুও বলেছেন, বিরোধী আসনে বামেদের থাকা উচিত ছিল।

তবে তৃণমূল দলের আত্মতৃপ্তির কোনও অবকাশ নেই। তাঁরা ভোট পেয়েছেন ২ কোটি ৮৬ লক্ষ। বিজেপি পেয়েছে ২ কোটি ২৮ লক্ষ।সুতরাং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের যে সুপ্ত ভাইরাস বাংলায় ছিল, তাকে প্রকাশ করেছে বিজেপি।তৃণমূলকে এখন শুধু করোনা ভাইরাস নয়, সাম্প্রদায়িক যে ভাইরাস বাংলায় গ্রাস করেছে তাকেও প্রতিহত করতে হবে। পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি ছেড়ে বেকারের কাজ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বাসস্থান এই মৌলিক অধিকার জনগণকে অর্জন করার সহযোগিতা করতে হবে।তবেই আবার সোনার বাংলা বাঙালিরাই গড়ে তুলতে পারবে। সেই অগ্নি পরীক্ষায় কিছুটা সফল হলে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী পদে মমতা ব্যানার্জি আসীন হলে আশ্চর্যের কিছু হবে না।

No comments:

Post a Comment