অনুলোম_ বিলোম একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি,দাবি যুক্তিবাদীদের - Songoti

অনুলোম_ বিলোম একটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি,দাবি যুক্তিবাদীদের

Share This
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: ২০১৪।১১ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ মেনে যোগব্যায়াম কে মানুষের মন ও শরীরের সুস্থতার জন্য সহায়ক স্বীকৃতি দিয়ে ২১ জুন তারিখটি আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের কথা জানালো রাষ্ট্রসঙ্ঘ। গত  তিন দশক ধরে ভারত সহ বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে  যোগা বিদেশি উচ্চারণে ইয়াগা হয়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।ভোগবাদী সমাজ আর সেই প্রেক্ষিতে মানুষের ইঁদুর দৌড় মানুষের মানসিক  স্থিতি ও  শারীরিক অসুস্থতা যত বাড়িয়েছে যোগার ওপর আস্থা ততই বেড়েছে। অনেকেই বলেন, যোগায় ভালো ফল পাচ্ছেন। হোয়াইট সোয়ান ফাউন্ডেশন  এর পক্ষে প্যাট্রিসিয়া প্রীতম নিমহ্যানসের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা:শিবরাম বাবামবাল্লিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মানসিক অসুস্থতায় যোগ শুধু উপকারী নয়, যোগ ই একমাত্র ওষুধ। বিজ্ঞান অবশ্য কোনো একজনের গবেষণার সাফল্যকে স্বীকৃতি দেয় না। বিশদ ভাবে পরীক্ষা হয়। তারপরই স্বীকৃতি মেলে। গত সাত বছরে  এই বিষয়ে ২৫টি গবেষণা পত্র ছাপা হয়েছে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ  সাইক্রিয়াটি জুলাই  সেপ্টেম্বর ২০১৩ সংস্করণে। যোগ চর্চাকে মানসিক রোগের চিকিৎসার সাফল্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
তবে সুস্থ জীবনযাপনে যোগাভ্যাসকে  প্রয়োজনীয় উপাদান মানলেও শারীরিক রোগের চিকিৎসায় এখনও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।ক্যান্সার, ডাইবেটিক সহ কঠিন অনেক রোগের ক্ষেত্রে নখ ঘষা এবং যোগ অব্যর্থ বলে দাবি করলেও বিজ্ঞান মানতে পারছে না একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ যোগাভ্যাস করলে রোগ সারবে। যোগ এখন  বিদেশের কল্যাণে  হয়েছে ইয়াগা। এই ইয়াগা এখন স্ট্যাটাস সিম্বল।প্রচার এমন হচ্ছে যেন যোগা আর যোগব্যায়াম এক।যোগব্যায়াম একটি শারীরিক কসরৎ। সবার জন্য এই কসরত উপকারী নয়। যেমন কপালভাতি।যাঁদের হার্নিয়া , গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ডিও ডেনাম আলসার কিম্বা হাইপারটেনশন আছে তাদের জন্য মারাত্মক।প্রশিক্ষিত  ব্যায়াম শিক্ষক ছাড়া যোগাসন করা নিজের ইচ্ছেমত রোগের চিকিৎসায় ওষুধ খাওয়া এক ব্যাপার।


যুক্তিবাদীরা বলছেন,যোগাসন কতোটা করবেন তার মাত্রা জ্ঞান থাকতে হবে। শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মানানসই কিনা না জেনে যোগাসন করলে উপকারের  চেয়ে ক্ষতি বেশি।যেমন মাত্রারিক্ত  ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা তৈরি করে স্ট্রোক হতে পারে।  ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যায়াম  কার্ডিও ভাসকুলার হার্টবলিয়াম(লেফট ও রাইট  ভেন্ট্রিকল) বাড়িয়ে হৃদয় প্রাচীরের ঘনত্ব বাড়ায়।ফলে মায়োকার্ডিয়াল কোষের ক্ষতি করে ।
রইলো প্রাণায়াম প্রসঙ্গ।যুক্তিবাদীদের বক্তব্য, যোগ কাকে বলে এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ঋষি পতঞ্জলির মতে , যোগ কথার অর্থ ,সহজাত প্রবৃত্তির নিরোধ। মহর্ষি ব্যাস বলেন,যোগ মানে সমাধি, ধ্যান। তান্ত্রিকরা বলেন,কুল কুণ্ডলিনী জাগ্রত করে আত্মার সঙ্গে  পরমাত্মার সাথে মিলন যোগ।জৈন মতে, সিদ্ধিই যোগ।গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,সফলতা, বিফলতা,আনন্দ দুঃখ, জয় পরাজয়, অনুকূল প্রতিকূল ইত্যাদি পরিস্থিতিতে মনকে শান্ত রাখাই যোগ। এখনকার যোগগুরুরা যোগ আর যোগ ব্যায়াম মিশিয়ে   ধাঁধা সৃষ্টি করেছেন। খেচরি মুদ্রা যোগ জানলে খিদে তেষ্টা থাকার কথা নয়। তাহলে রামদেব বাবাজী আহার বা জলপান করেন কেন?
রামদেববাবা চার রকম প্রাণায়ামের কথা বলেছেন। বা  হ্যবৃত্তি, অভ্যন্তর বৃত্তি, স্তম্ভ  বৃত্তি ও বাহ্যভান্তর বৃত্তি। এই নিশ্বাস প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ  বিধি আসলে সোনার পাথর বাটি।


মানবদেহের গঠনতন্ত্র বলে,নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রশ্বাস যায় শ্বাসনালী বা ল্যারিংস এ।শ্বাসনালী দিয়ে যা যায় ফুসফুসে।ফুসফুস থেকে শ্বাসনালী হয়ে নিশ্বাস  হয়ে নাকের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে আসে। সুতরাং  নাকের ছিদ্র আঙ্গুল দিয়ে চেপে বন্ধ করে নিশ্বাস প্রশ্বাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা মূর্খতা।কারণ, দুটি নাকের ছিদ্রই শেষপর্যন্ত একটি শ্বাসনালীতে গিয়ে মিশেছে। প্রাচীন কালে মানব দেহের নিখুঁত তত্ব জানা না থাকায় উদ্ভট ধারণা তৈরি হয়।তাই এখনও বহন করে চলেছেন আজকের যোগ গুরুরা। অনেকে উপকারের কথা বলেন। যা আসলে মানসিক শান্তি।
যুক্তিবাদীরা এই ব্যাপারে উল্লেখ করেন ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত এনডি টিভিতে আয়োজিত এক  টক শো এর কথা। যেখানে মুখোমুখি হন যুক্তিবাদী আন্দোলনের পথিকৃৎ প্রবীর ঘোষ এবং রামদেব বাবাজী। প্রবীর বাবু প্রশ্ন করেছিলেন, প্রাণ মুদ্রায় তো চোখের  অসুখ সারে।আপনার  বাম চোখ  সারাচ্ছেন না কেন? তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন রামদেব বাবাজী।বলেন,তিনি যোগে দশ হাজার রোগী সুস্থ করেছেন।প্রবীর বাবু চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন,আমার পাঠানো একজনকে আপনার আশ্রমে রেখে সুস্থ করে দিন।মেনে নেবো। সেই চ্যালেঞ্জ রামদেব বাবা নেননি। বিশ্ব যোগদিবসের প্রাক্কালে আবার সেই প্রশ্ন ওঠে যোগ আর যোগব্যায়াম কি এক?ঠিক যেমনটি আমরা অবাক জলপানে পড়েছি  জল আর জলপাই কি এক?

No comments:

Post a Comment