হোমিও চিকিৎসায় রোগ প্রতিরোধে অনেক ওষুধ আছে: ড:প্রকাশ মল্লিক - Songoti

হোমিও চিকিৎসায় রোগ প্রতিরোধে অনেক ওষুধ আছে: ড:প্রকাশ মল্লিক

Share This
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বিশ্ব জুড়ে ত্রাস । মহামারী করোনা ভাইরাসের কবলে মানব সভ্যতা। করোনা ভাইরাস একটি এমন ভাইরাস, যা তিনশ ভাইরাসকে যদি একত্র করা হয় আকারে হবে একটি ক্ষুদ্র লবণ কণার মত। গ্রীক শব্দ  করোন থেকে ১৭ শতকে করোনা শব্দের সৃষ্টি। অর্থ, পুষ্প মুকুট। স্প্যানিশ ভাষায় করোনা মানে  স্পাইকযুক্ত মুকুট । সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল বইএর পাতায় বোম্বাগড়ের রাজার ছবিটা মনে পড়ছে? করোনা র আকার ঠিক তেমন। সূর্যের পূর্ণগ্রাস গ্রহণে সূর্যের চারপাশে যে আলোর বলয় দেখা যায় করোনার আকার ঠিক তেমন। অনেকে বলেন, ড্যাফোডিল ফুলের পাপড়ির মাঝে যে ট্রাম্পেটের মত বেরিয়ে থাকে তাকেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা করোনা বলেন।


ভাইরাস শব্দের ল্যাটিন অর্থ বিষ। সে যুগে যে কোনো  বিষাক্ত পদার্থকেই ভাইরাস বলা হত। বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলেন,করোনা ভাইরাস একটি জৈব জীবাণু। কেউ বলেন,না। এই ভাইরাস জীবিত ও অজীবিত'র একটি মধ্যবর্তী দশা। অবশ্য এই নিয়ে মানুষের মাথা ব্যাথা নেই। সকলেই চিন্তিত, এই মারাত্বক ছোঁয়াচে রোগের কোনো ওষুধ নেই বলে। তবে বিজ্ঞানীরা  বসে নেই।বিশ্বজুড়ে চলছে গবেষণা।অনেক দেশই দাবি করছে,প্রতিষেধক এই বেরোলো বলে। মাঝে মধ্যে বাতাসে ভেসে উঠছে এক একটি ওষুধের নাম। সবই অ্যালোপ্যাথি। কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকেরা বুক ঠুকে বলছেন, তাঁদের হাতে আছে বিকল্প ওষুধ। যে ওষুধ উপসর্গ দেখে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের আয়ুষ বিভাগ হোমিওপ্যাথি ওষুধ আর্সেনি কাম অ্যালবাম _৩০ কে ছাড়পত্র দিয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক গত ফেব্রয়ারি মাসেই প্রতিরোধক ওষুধ  হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দিলেও চিকিৎসকদের একটি মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়।কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নতুন নির্দেশে বিরুদ্ধবাদীরা চুপ করে গেলেও মনে মনে যে অসন্তুষ্ট তা বোঝাই যায়।অথচ আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হোমিও চিকিৎসক ড :প্রকাশ মল্লিক তাঁর কলকাতার চেম্বারে বসে বলেন, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের হোমিও  চিকিৎসকদের কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু  বেশিরভাগ আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার চিকিৎসক আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থাকে ব্রাত্য করে রাখতে চান। এর পিছনে মালটি বিলিয়ন ওষুধ কোম্পানিগুলির হাতও আছে। তবু তিনি তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতি প্রবল আস্থা রেখে বলেন, চাকুরীজীবী হোমিওপ্যাথ বিশেষজ্ঞ নয়, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের উচিত ,আমরা যাঁরা হাজার হাজার হোমিও চিকিৎসক আছি , প্রতিদিন আমরা প্রচুর পরিমাণে রুগী দেখি । তাদের উপসর্গ বিচার করে  অভিজ্ঞতালব্ধ ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তুলি । তাঁদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হোক। আশার কথা ,স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি বিশেষ হোমিও ওষুধকে করোনা প্রতিরোধে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু হোমিও পদ্ধতিতে আরও কয়েকটি ওষুধ আছে যা করোনা প্রতিরোধে কাজ দিতে পারে।যেমন আমি একটা ওষুধ প্রয়োগের কথা বলছি।ওষুধটির নাম টিউ বার কুলিনিয়াম এভিয়ার ২০০। আমি বলেছি বলে নয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রক ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা করুক,পর্যবেক্ষণ,করুক।তারপর সিদ্ধান্তে আসুক।আমার মত অনেক হোমিও ডাক্তারের অভিজ্ঞতালব্ধ আরও ওষুধ আছে যা করোনা প্রতিরোধে কাজ দিতে পারে। আমার ৩৬বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি , করোনা ভাইরাস শুধু নয়,আগামীদিনের অন্য ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে এইসব ওষুধ কাজ দেবে।আমি হতাশ রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হোমিওপ্যাথ সম্পর্কে অনীহা দেখে। আমি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের চিকিৎসকদের বলি, হোমিও প্যাথকে অবজ্ঞা না করে আজকের এই বিপদের দিনে আসুন একসাথে  লড়ি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে।
আশার কথা, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হোমিও ওষুধ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশ মত বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকদের খাওয়ানো শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। গত সোমবার থেকে সেই কর্মসূচি চালু হয়ে গেছে। পজিটিভ ব্যক্তির সংস্পর্শে যাঁরা এসে কোয়ারানটিনে আছেন এবং যাদের ঝুঁকি আছে তাঁদের বাড়িতে যাচ্ছেন পুরসভার হোমিওপ্যাথ মেডিক্যাল অফিসারেরা।চিকিৎসক মহলে আপত্তি থাকলেও পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা জানিয়েছেন,  বিভিন্ন রাজ্য থেকে হোমিওপ্যাথ ওষুধ প্রয়োগ  করার ইতিবাচক খবর মিলছে। খালি পেটে এই ওষুধ খাওয়ার পদ্ধতি খুব সরল।

যে হোমিও ওষুধ নিয়ে কিছু ডাক্তারদের আপত্তি সেই সম্পর্কে হোমিও ডাক্তারবাবু দের বক্তব্য, আমাদের বিরোধী যারা তারা ভুলে  গেছেন, হোমিও চিকিৎসা পদ্ধতির জনক হ্যানিম্যান নিজে ছিলেন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক। সেই চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা দেখেই তিনি হোমিও চিকিৎসার সৃষ্টি করেন। রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসক মহেন্দ্র লাল দত্ত প্রথম জীবনে ছিলেন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক।হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাতে তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী ।বন্ধু ছিলেন বিদ্যাসাগরের।বিদ্যাসাগর তাঁকে বলেন, হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ফিলজ ফি অফ হোমিওপ্যাথি  বইটি পড়তে। ১৯০২। তিনি বইটি পড়ার পর নিজের অজ্ঞতা বুঝলেন। লিখলেন ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিসিন।অ্যালোপ্যাথি ছেড়ে হোমিওপ্যাথি ধরলেন।এমনকি মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ বার্ষিক সভাতেও হোমিওপ্যাথির সমর্থনে বক্তব্য রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট এই পরিবর্তন ভালো চোখে দেখেননি। ফলে মহেন্দ্র লাল দত্ত ইস্তফা দেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও আস্থা রাখতেন হোমিওপ্যাথিতে। ড:জগৎ রায়ের  রোগী ছিলেন তিনি।পারিবারিক ক্ষেত্রেও এই হোমিও ডাক্তারবাবুর শরণাপন্ন হতেন তিনি। তাঁর লেখা বই পড়ে শিলাইদহের প্রজাদের তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতেন।
বিদ্যাসাগর নিজে যখন শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, তাঁকে দেখতেন হোমিওপ্যাথ সুকি য়া স্ট্রিটের ড:চন্দ্র মোহন বোস। সুস্থ হন বিদ্যাসাগর।তিনিও উৎসাহী হয়ে হোমিও প্যাথির বইপত্র কিনে পড়াশুনো চালু করেন।এমনকি শব ব্যবচ্ছেদ শিখতে বেশ কয়েকটি নরকঙ্কালও কেনেন।পরবর্তী সময়ে কলকাতা ছেড়ে যখন আদিবাসী পল্লীতে যান, সেখানে সেই গরীব মানুষদের তিনি চিকিৎসা করে সুস্থ করতেন হোমিও ওষুধ দিয়ে। ড: মল্লিকের দাবি,এর আগে জাপানি এনসেফালাইটিসে বেলেডোনা ২০০ ভালো কাজ দেয়। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ   যুদ্ধের সময় ব্যাপক কলেরা দেখা দেয়।তখনও হোমিওপ্যাথী ওষুধ কার্যকর হয় ম্যাজিকের মত। মনে রাখতে হবে, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেই সমস্যা মিটে  যাবে ভাবার কোনও কারণ নেই। দরকার রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা। যেটা হোমিওপ্যাথি পারে । এটাও ঠিক, হোমিওপ্যাথিতে রোগ না সারলে সে যুগে ভ্যানগগ , বিঠোফেন কেন হোমিও চিকিৎসায় আস্থা রাখতেন? আজও ইংল্যান্ডের রানী কুইন এলিজাবেথ নিজে হোমিও চিকিৎসা করান। এমনকি কোথাও গেলে সঙ্গে যান হোমিও চিকিৎসকের একটি দল।
এই মুহূর্তে সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ  ইন হোমিওপ্যাথি সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইসরি বোর্ড আয়ুষ মন্ত্রককে যে  হোমিও ওষুধ  প করোনা মোকাবিলার জন্য  প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন, সেই সম্পর্কে ড:প্রকাশ মল্লিকের মন্তব্য, দেরিতে হলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের শুভবুদ্ধির যে উদয় হয়েছে সেটা  ইতিবাচক।প্রশাসনের একটু সহযোগিতা পেলে হোমিওপ্যাথি করোনা ও অন্য যে কোনও কঠিন রোগে  মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষায় হাতিয়ার  হতে পারে তার প্রমাণ মিলবে। মানুষ উপকৃত না হলে কেন আমাদের চেম্বারে ভিড় হয়?

No comments:

Post a Comment