ভেক্টর বাহিত রোগ বাড়ছে জলবায়ুর পরিবর্তনে - Songoti

ভেক্টর বাহিত রোগ বাড়ছে জলবায়ুর পরিবর্তনে

Share This
ডেঙ্গিই হোক বা ম্যালেরিয়া, সংক্রমণের স্থায়িত্বের জন্য ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই আদর্শ --- বলছেন পতঙ্গ বিশেষজ্ঞরা। যে কারণে গত শতাব্দীতে কলকাতায় বড়জোর অক্টোবর পর্যন্ত দেখা যেত মশাবাহিত রোগের দৌরাত্ম্য। একদিকে নভেম্বরে তাপমাত্রা কমে যাওয়া, অন্যদিকে বৃষ্টিপাত না-থাকায় সাধারণ ভাবে ভেক্টরবাহিত রোগগুলির দাপট দেখা যেত না। কিন্তু এখন? এ বছরের নভেম্বরে ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ছিল ৮ দিন। ৩০ থেকে ৩২ ডিগ্রির মধ্যে ধরলে সেই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২১ দিন। অথচ আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবে ১৯০১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এক শতাব্দীতে কলকাতায় গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অন্যদিকে বৃষ্টিও নভেম্বর পর্যন্ত চলায় এ বছর ডেঙ্গির পোয়া বারো।




কেবল কলকাতা নয়, রাজ্যের শীতলতম প্রান্ত দার্জিলিংয়ের কথাই ধরা যাক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক গৌতম সাহা জানান, ৩০ বছর আগে পর্যন্ত দার্জিলিংয়ে কিউলেক্স মশা মিললেও দেখা মিলত না অ্যানোফিলিস মশার। শিলিগুড়ি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে রংটং পর্যন্তই মিলত অ্যানোফিলিস মশা। সেই জায়গার উচ্চতা ১৪২ মিটার। অথচ, দার্জিলিংয়ের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেখানেও এখন দেখা মিলছে অ্যানোফিলিসের। তার জেরে বাড়ছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ। টেম্পারেচর গ্র্যাডিয়েন্ট রেঞ্জ এক্সটেনশনের ফলেই এমন কাণ্ড বলে মনে করছেন ওই পতঙ্গবিদ।
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী দেবীশঙ্কর সুমনের মতেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রভাব পড়ছে ভেক্টর বাহিত রোগগুলির ক্ষেত্রে। যে এলাকাগুলিতে আগে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগের তেমন প্রকোপ ছিল না, এখন সে সব এলাকাতেও বাড়ছে এই রোগ।
ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় কুমার হাটি বলেন, ‘সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্তই ছিল মশার প্রজননের মরসুম। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এখন নভেম্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে সেই পর্ব। ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসই ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ও স্থায়িত্বের আদর্শ তাপমাত্রা। এখন নভেম্বরেও ওই তাপমাত্রা থাকায় বাড়ছে এই সব রোগের প্রকোপ।’ ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘১৯৫৪-য় এ দেশে প্রথম ডেঙ্গি দেখা দিলেও ১৯৬৩-৬৫ র আগে তা প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে দেখা দেয়নি। মশার জিনের পরিবর্তনের কারণেই এটা হচ্ছে। এমনকী প্রতি বছর এমন ব্যাপক হারেও দেখা যেত না ওই রোগ। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে এখন শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামেও দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গি। এডিস ইজিপ্টাই ছাড়াও এডিস অ্যালবোপিক্টাস এর জন্য দায়ী। অথচ একুশ শতকের আগে এডিস অ্যালবোপিক্টাসের দেখা মিলত বন, জঙ্গলে। সেখানে তাদের প্রজনন হত। এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে তারা।’
">কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার আরও এক অধ্যাপক গৌতম আদিত্যর মতে, মশা বাহিত রোগ ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, জাপানিজ এনকেফালাইটিস, ফাইলেরিয়াসিস, স্যান্ড ফ্লাই বাহিত কালাজ্বর, যান্ত্রিক ভাবে মাছির মাধ্যমে সংক্রামিত টাইফয়েড, কলেরার মতো রোগ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে। যদিও এ পর্যন্ত ফাইলেরিয়াসিস এবং কালাজ্বর রাজ্যের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও অন্যান্য সময়ে উষ্ণতার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের ধরনে বদল এবং বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে এই আশঙ্কা থাকছে। যেমন, এ বছর অক্টোবর, নভেম্বরেও ভালো বৃষ্টি হয়েছে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। আর মশার বংশবৃদ্ধির জন্য তা অত্যন্ত অনুকূল। আবার ওই সময়ে ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আবর্জনা। যা মশার বংশবৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক। এই পরিস্থিতিতে দূষণ রোধ এবং বিশেষ করে উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া হলে এ ধরনের রোগ মোকাবিলায় সহায়ক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। -  এই সময়

No comments:

Post a Comment