বয়স কতই বা। ৮১! না, না। সত্যি বললে উল্টোই হবেন। ১৮? হ্যাঁ। সাহিত্য জগতে যেভাবে দাঁপিয়ে বেড়াতেন, তাতে বাংলার নবীনতম নারী সাহিত্যিকেরও তিনি 'সই' ছিলেন। সইয়ের বয়স তো সইয়ের সমানই হবে। নবনীতা দেবসেনের আগ্রহেই তৈরি হয় 'সই' নামের সংস্থা। প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্নেহ ভালবাসার সম্পর্ক বজায় রাখতেন। পদ্মশ্রী (২০০০), সাহিত্য আকাদেমি, কমলকুমার ও মহাদেবী বর্মা পুরস্কার জয়ী এই "যৌনদাসী" অক্ষরজগত ছেড়ে গেলেন নভেম্বর বিপ্লবের বার্ষিকীতে। জন্মেছিলেন ৮১ বছর আগে, বিবেকানন্দের জন্মদিনের পরের দিন।।
যৌনদাসী শব্দটা কি আজ না বললেই চলতো না? আমার মনে হয়, আজই বলা দরকার। কারা সমাজের প্রভু হয়েছেন আর কাকে কি বলছেন, আজই তার অমোঘ উচ্চারণের সময়। সমাজের উচ্ছিষ্টরা মাথায় চড়েছে, আর 'ভালবাসার বারান্দা' ছেড়ে 'নোটবই' নিয়ে লোকান্তরে যাচ্ছেন নবনীতা দেবসেন--- এ বড় সুখের সময় নয়! নরেন্দ্র দেবের মেয়ে, অমর্ত্য সেনের স্ত্রীই শুধু নয়, তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদের পরেও অমর্ত্য সেনের মা, অর্থাত একদা শ্বাশুরী অমিতা সেনের যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব তিনিই পালন করেছেন।দরকারে অদরকারে অমিতা সেন নবনীতাকেই ডাকতেন। মেয়েদের স্বজগতে প্রতিষ্ঠার পিছনেও তিনিই চালিকা শক্তি। মহাশ্বেতা দেবীর পর তিনিই ছিলেন সমকালীন বাংলা সাহিত্যে মাতৃস্বরূপা৷ এক অর্থে সই নবনীতার প্রয়াণ মাতৃবিয়োগের অনুভূতি।
উইকিপিডিয়ায় তাঁর সম্পর্কে আছে -- নবনীতা দেবসেন দক্ষিণ কলকাতায় হিন্দুস্থান পার্কে তার বাবা- মা'র 'ভালবাসা'(এখনো সেখানেই বসবাস করেন) গৃহে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা নরেন্দ্র দেব ও মাতা রাধারানী দেবী সেযুগের বিশিষ্ট কবি দম্পতি। ছেলেবেলায় এক বিশেষ সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে তিনি বড় হয়েছেন। বাংলা ও ইংরেজি ছাড়া উনি হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া, ফরাসী, জার্মান, সংস্কৃত এবং হিব্রু ভাষাগুলি পড়তে পারেন। গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস, লেডি ব্রেবোর্ণ ও প্রেসিডেন্সি কলেজ, যাদবপুর , হার্ভার্ড, ইণ্ডিয়ানা (ব্লুমিংটন) ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করেছেন। ১৯৭৫- ২০০২ তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপিকা ও বেশ কিছুকাল বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপেরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন। তাকে তুলনামূলক সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট অথরিটি মানা হয়। যাদবপুরে তিনি কবি বুদ্ধদেব বসু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের স্নেহধন্য ছাত্রী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি সাহিত্য একদেমি পুরস্কার পান তার আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা 'নটী নবনীতা' গ্রন্থের জন্যে। এছাড়াও তিনি মহাদেবী বর্মা ও ভারতীয় ভাষা পরিষদ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯৫৯ এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম প্রত্যয়' প্রকাশিত হয় ও প্রথম উপন্যাস 'আমি অনুপম' ১৯৭৬ এ। কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণ কাহিনী, উপন্যাস মিলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ৩৮। এখনো নিয়মত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন।
১৯৬০ এ তিনি বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ (পরবর্তীকালে নোবেলজয়ী) অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ও তাদের দুই কন্যা। জ্যেষ্ঠা অন্তরা সাংবাদিক ও সম্পাদক এবং কনিষ্ঠা নন্দনা অভিনেত্রী ও সমাজকর্মী।
No comments:
Post a Comment