ফিল্ম সীমাবদ্ধ, তাই থিয়েটার এগিয়ে - Songoti

ফিল্ম সীমাবদ্ধ, তাই থিয়েটার এগিয়ে

Share This
থিয়েটারের শোয়ের জন্য ঝটিতি কলকাতা ঘুরে গেলেন পরেশ রাওয়াল৷ তাঁর সঙ্গে সিনেমা, থিয়েটার, ধর্মবিশ্বাস-সহ নানা ব্যাপারে কথা বললেন ইন্দ্রনীল শুক্লা আগেও বহুবার এসেছেন কলকাতায়৷ আর 'কিষেণ ভার্সেস কানহাইয়া' নাটকটি নিয়ে এই নিয়ে পঞ্চমবার এ শহরে এলেন পরেশ রাওয়াল৷ এবার ইন্দ্ররঙ মহোত্সবে পারফর্ম করার জন্য৷ দেশ-বিদেশে এ নাটকের সাড়ে চারশোর উপর শো হয়েছে৷ বলিউডি ছবিও হয়েছে৷ এতে তিনি এক নাস্তিকের ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি ভূমিকম্পে ভেঙে যাওয়া দোকানের ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেছেন কৃষ্ণ ভগবানের বিরুদ্ধে৷ বাস্তবেও কি তিনি এমন নাস্তিক? চরিত্রটার সঙ্গে তাঁর নিজের কতখানি মিল? অভিনেতা বলছেন, 'হ্যাঁ আমার নিজের বিশ্বাস বেশ খানিকটা তো রয়েইছে এই নাটকে৷ আমি নিজে বিশ্বাস করি যে সব মানুষেরই উচিত গরিব মানুষকে সাহায্য করা৷ দান করা৷ এর মধ্যে দিয়েই কেবলমাত্র ঈশ্বরের কাছাকাছি পৌঁছনো যেতে পারে৷ ধর্মের নানা আচার অনুষ্ঠানের মাঝে আসল ঈশ্বরকেই আমরা হারিয়ে ফেলি৷ নিজের কাছে সত্ থাকা, সত্যিকে প্রকাশ করা খুব জরুরি৷ নাস্তিক নই, তাই বলে ধর্মের নামে যে ভণ্ডামি চলে তাতেও আমার আস্থা নেই৷'
কিন্ত্ত নাটকে এই ব্যাপারটা তুলে আনায় কি সত্যি প্রভাব পড়ে সমাজে? 'পড়ে৷ বিশ্বাস করুন৷ পড়ে৷ আমার পরিচিত বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বন্ধু গরিব মানুষের জন্য ফাণ্ড তৈরি করা, চ্যারিটেবল ফাণ্ডে ডোনেট করা শুরু করেছেন নতুন করে৷ এটা আমার পরিচিত জনের মধ্যে৷ আমার বিশ্বাস এমন আরও অনেকে আছেন, যাঁরা এ নাটক দেখে দান করার কথা ভেবেছেন, যাঁদের আমি হয়তো চিনি না৷ নাটক কিন্ত্ত জনমানসে প্রভাব ফেলে৷'
এমন দিনে তিনি কলকাতায় এসেছেন যেদিন মোদি সরকারের নোটবন্দির বর্ষপূর্তিতে প্রতিবাদে সরব রাজ্যের শাসক দল৷ পরেশ নিজে আমেদাবাদ ইস্ট আসন থেকে জিতে আসা বিজেপি সাংসদ৷ অতএব হাওয়া বুঝে প্রথমেই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন যে পলিটিক্যাল প্রশ্ন করা যাবে না৷ তবু এমপি হওয়ার পর অভিজ্ঞতা, ভাবনা এসব তো জানতে ইচ্ছেই করে৷ বললেন 'দেখুন, প্রত্যেক মানুষই পলিটিক্যাল৷ প্রত্যেকেরই নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত নিশ্চয়ই আছে৷ কিন্ত্ত সক্রিয় রাজনীতিটা যে আলাদা জিনিস, তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ শুধু অভিনেতা বা নাগরিক হিসেবে অনেক কিছু অজানা, অদেখা হয়ে থাকে৷ কিন্ত্ত রাজনীতিক হিসেবে দেশ, রাজ্য, সমাজের চিত্রটা অনেক বড় আকার নিয়ে দেখা যায়, তাতে সন্দেহ নেই৷ আর কিছু বলব না, বিষয়টা পলিটিক্যাল লাইনে চলে যাচ্ছে (হাসি)!'
কিন্ত্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর থিয়েটারের উন্নতির জন্য কোনও পরিকল্পনা তাঁর আছে কি? বললেন, 'আমি অবশ্যই মনে করি যে থিয়েটার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের সাহায্য বাড়ানো দরকার৷ কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই রয়েছে৷ দেখা যাক৷'
ছবি আর নাটক, দুটো মাধ্যমেই তিনি সফল৷ কিন্ত্ত কোন শিল্পমাধ্যমকে তিনি এগিয়ে রাখবেন? 'অবশ্যই নাটক৷ ছবি একবার শু্যটিং আর এডিটিং হয়ে গেল তো কাজ শেষ৷ তাকে তো চাইলেও আর পাল্টানো যাবে না, শত ইচ্ছে হলেও৷ এটাই হল ফিল্মের মস্ত বড় সীমাবদ্ধতা৷ তাই আমার কাছে থিয়েটার সবসময়েই ফিল্মের আগে৷'
আরও খানিক ব্যাখ্যা করে পরেশ বলেন, 'থিয়েটারের সুবিধা হল তাকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাতে পাল্টাতে যাওয়া যায়৷ সময়ের সঙ্গে কনটেন্টকে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়৷ তাছাড়া অভিনেতার স্বাধীনতাও তো থিয়েটারে অনেক বেশি৷ মঞ্চের উপরে সে নিজেকে ইম্প্রোভাইজ করার সুবিধা পায়৷ সামনে জীবন্ত মানুষ বসে আছে, তাই কোনটা খারাপ কোনটা ভালো সে সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারে৷ এত মস্ত সুবিধা৷ সিনেমায় তো ডিরেক্টর যা বলবেন মুখ বুজে শুনে যেতে হবে৷ নাটকে অভিনেতার স্কোপ অনেক বেশি৷'
তাহলে ফিল্মে তাঁর জনপ্রিয়তা? 'জনপ্রিয়তার সঙ্গে নিজের পছন্দের সম্পর্ক নেই৷ তবু বলছি, আমি দুটো মাধ্যমেই খেটে কাজ করার চেষ্টা করেছি৷ অনেকেই আছেন যাঁরা আমায় শুধু ফিল্মেই দেখেছেন৷ তাঁদের কাছে আমি কমেডিয়ান পরেশ রাওয়াল৷ বেশ তো, তাও যদি হয়, তাহলেও কিন্ত্ত তাঁরা আমার নাটক থেকে শেখা কমিক টাইমিংটাকেই পছন্দ করছেন!'
কলকাতার থিয়েটার দেখেছেন? 'নাটক করি আর কলকাতার থিয়েটার দেখিনি হয় নাকি! দেখেছি মানে? শিখেছি বলতে পারেন৷ সেভেন্টিজে যখন দিল্লিতে শম্ভু মিত্র-তৃন্তি মিত্র-র নাটক হত, উত্পল দত্ত-র নাটক হত, ছুটে ছুটে যেতাম৷' কোন নাটকটার কথা অফ হ্যান্ড মনে পড়ছে? এক নিঃশ্বাসে উত্তর 'রক্তকরবী'! উফ্, জেম অফ আ প্রোডকশন!'
আর এখনকার বাংলা নাটক? 'নাহ দেখা হয়নি৷ তবে আমি খবর রাখি যে কলকাতায় অনেক রকম বিষয় নিয়ে নাটক হয়৷ এই উত্সবেই বাইরে পোস্টার দেখলাম আর্থার মিলারের 'প্রাইস' থেকে অ্যাডাপ্টটেড নাটক হচ্ছে৷ আমার নিজেরও 'প্রাইস' করার ইচ্ছে আছে অনেকদিন ধরে৷ দেখা যাক৷' পরেশ বলে চলেন, 'কলকাতায় যত হল আছে নাটকের জন্য এত হল কিন্ত্ত মুম্বই বা দিল্লিতে নেই৷ জাঁকজমক হয়তো বেশি, কিন্ত্ত হল কম৷ কাপুর পরিবার যে পৃথ্বী থিয়েটার টিকিয়ে রেখেছে মুম্বইতে এটা মস্ত ব্যাপার৷ ওঁদের পুরস্কত করা উচিত৷ ওই থিয়েটারের জমি বেচে ওঁরা কয়েকশো কোটি টাকা পকেটে পুরে ফেলতে পারতেন৷ কিন্ত্ত তা ওঁরা করেননি৷ এই হচ্ছে নাটকের জন্য ভালোবাসা৷'
ফিল্মের মতো নাটকের জন্যও কি সেন্সর থাকা উচিত, অনেকে তো এমন দাবি তোলা শুরু করেছেন৷ 'আমি সবসময় সেন্সরের বিরুদ্ধে৷' উঠে পড়লেন পরেশ রাওয়াল৷ মেক-আপে বসতে হবে যে!
সৌজন্যঃ এইসময়

No comments:

Post a Comment