মিতুর বায়না || নিশা ঘোষ দস্তিদার || সাহিত্যগ্রাফি - Songoti

মিতুর বায়না || নিশা ঘোষ দস্তিদার || সাহিত্যগ্রাফি

Share This

ছোট্ট মিতু রোজ বায়না ধরে,তাকে পুষির মত মোটা, সুন্দর, লম্বা একটা লেজ এনে দিতে হবে। খেতে-শুতে, উঠতে-বসতে এক‌ই বায়না। পুষির মত মোটা লেজ তার চাই।
  পুষির যখন গলার রগ ফুলিয়ে পাশের বাড়ির বন্ধুর সাথে গর্-র-র করে ঝগড়া করে, তখন ওর লেজটা কি সুন্দর সাপের ফণার মতো দুলতে থাকে। মিতু অবাক হয়ে দেখে আর ভাবে, ওরকম সুন্দর লেজ যদি ওর একটা থাকত, তবে কি মজাই না হতো। পুষির সাথে ওরকম ভাবে ঝগড়া করতে পারত।
  লেজের বায়না ধরে কেঁদে কেঁদে মিতু অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ল। এমন সময় পুষি এসে ডাকল "এই মিতু, মিতু, ওঠ।" উঠে বসল মিতু। পুষি বলল "তোর আমার মতো লেজ নেই বলে খুব কষ্ট নারে?"
মিতু কেঁদে ফেললো। "হ্যাঁ রে পুষি, আমার খুব কষ্ট। তোর লেজটা আমায় দিয়ে দেনা।"
  "নারে মিতু , আমার লেজটা তোকে দিতে পারি নারে। আমার লেজটা যদি তোকে দিয়ে দিই, তাহলে আমার বন্ধুরা আমাকে চিনতেই পারবে না। যদি ও বা চিনতে পারে, কিন্তু খেলতে নেবে না। আমার সাথে মিশবে ও না।"
  মিতু রেগে গেল। "তবে আমায় ডাকলি কেন? যা ভাগ,পালা। কালকে আমি তোকে আর মাছ ও দেব না, দুধ ও দেব না। তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে একা খেয়ে নেব।"
  পুষি বলল "আহা, রাখছিস কেন? আমার কথা শোন। আমি তোকে একটা লেজ এনে দিতে পারি।"
 "কার কাছ থেকে?"
  আমার মাসির কাছ থেকে। আমার মাসির কাছে অনেক লেজ আছে। যারা লেজের জন্য কাঁদে,মাসি তাদের লেজ দেয়।"
  "তবে এনে দে।"
  আমার মাসি তো এখানে থাকে না। সেই সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে থাকে। যাবি আমার সাথে? গেলেই লেজ পাবি।"
  মিতু যেতে রাজি হয়ে গেল। পুষির পিঠে বসল। দেখতে দেখতে মিতুকে পিঠে নিয়ে পুষি আকাশে উঠে গেল। কত উঁচুতে উঠল। একেবারে মেঘেদের সীমানায়। দুজনে চলছে ভেসে। এমন সময় একটা কুচকুচে কালো মেঘ পথ আটকে দাঁড়াল।
  পুষি গর্-র-র করে বলল "পথ আটকাচ্ছিস কেন? সরে দাঁড়া। দেখছিস না মিতু কে নিয়ে মাসির বাড়িতে যাচ্ছি।"
  মেঘ বলল  "না, পথ ছাড়ব না। আমাদের সীমানা দিয়ে যাওয়া চলবে না। আমরা কি তোদের সীমানাতে যাই?"
  পুষি বলল  "যাস না কেন? আমরা কি তোদের যেতে মানা করেছি।"
  "তোর কোনো কথাই শুনব না। মোট কথা এখানে থেকে যেতে পারবি না।"
  "আমাকে রাগাস না কালো মেঘ। তাহলে উচিত শিক্ষা দিয়ে দেব।"
  "কি করবি তুই?"
   "কি করব?" বলে পুষি পেছন ঘুরে সপাং করে কালো মেঘের মাথায় একটা লেজের বাড়ি মারলো। মেঘটা বাবাগো-মাগো বলে খিঁচে পড়ে কি দৌড়। মেঘের দৌড় দেখে, মিতু জোরে হাততালি দিয়ে উঠলো।
   কিছুটা দূর যেতে না যেতে একটা ধূসর মেঘ এসে আবার পথ আটকে দাঁড়াল।
  পুষি বলল  "পথ ছাড়। দেরি হয়ে যাচ্ছে।"
  মেঘ জিজ্ঞাসা করল  "মিতুকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?"
  "মাসির কাছে। লেজ আনতে।"
  "লেজ আনতে। কি মজা" বলে ধূসর মেঘটা পথ জুড়ে নাচতে শুরু করে দিল।
  পুষি বলল  "পথ ছাড়বি, না মজা দেখবি।"
  নাচ থামিয়ে মেঘ বলল  "পথ ছাড়তে পারি,  একটা শর্তে।"
  "কি শর্ত? তাড়াতাড়ি বল।"
   "আমার জন্য একটা লেজ আনবি। আমার বহুদিনের শখ। লেজ পরে মেঘ দাদাদের সাথে খেলা করব। বেশ মজা হবে।"
  "হ্যাঁ, আনব। এখানে চুপটি করে বসে থাকবি। ফিরে যাবার সময় দিয়ে যাব।"
  পথ ছেড়ে দিল ধূসর মেঘ। ওরা আবার চলতে লাগল। কিছু দূর যেতে না যেতে একটা রোগা লিকলিকে সাদা মেঘ ওদের সাথে চলতে লাগল।
  মেঘের আঙিনা দিয়ে, চাঁদের আলো গায় মাখতে মাখতে, মিতুকে পিঠে নিয়ে ভেসে চলছে পুষি।
  লিকলিকে জিজ্ঞেস করল  "কোথায় যাচ্ছিস পুষি?"
   "মাসির বাড়ি।"
   "আমাকে তোর সাথে নিয়ে চল, তোর অনেক উপকার করবে।"
  "অতটা পথ আমাদের সাথে যেতে পারবি না। তোর খুব কষ্ট হবে।"
  "তোরা যেতে পারলে, আমি যেতে পারব না কেন রে?"
  "তুই যে বড্ড রোগা। পেট ভরে খাস্ না বুঝি?"
  "খেতে পারিনা রে পুষি। আমার যে অসুখ।"
  "যা ডাক্তার দেখাস না?"
  "দেখাই। ডাক্তার বলেছে ব্যায়াম করতে। সকলে বিকালে হাঁটতে।"
  চলতে চলতে মিতুর খুব খিদে পেয়ে গেল। পুষির কানে কানে জিজ্ঞেস করল  "এখানে ক্যাডবেরি পাওয়া যায়?"
  পুষি বলল  "এখানে পাওয়া যাবে না।একটু এগিয়ে গেলে একটা শহর পড়বে। নাম শুকতারা শহর। ওই শহরে সবকিছু পাওয়া যায়। ওখানে পৌঁছে আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে নেব।"
  লিকলিকে বলল  "পুষি, তোর জন্য দুটো নেংটি ইদুর কিনে আনব। ওই শহরে ইঁদুর খুব সস্তা।"
  গল্প করতে করতে কখন সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে গেল তা কেউ বুঝতে ই পারল না। মিতুর আর শুকতারা শহর দেখা হলো না। অনেক উঁচু একটা পাহাড় দেখা গেল। পুষি বলল "ওই পাহাড় পেরলেই আমার মাসির বাড়ি।"

: Advertisement :



  লিকলিকে কোন দিকে খেয়াল না করে, আপন মনে চলতে লাগল। চলতে চলতে পাহাড়ে গিয়ে জোরে এক ধাক্কা খেল। মিতু দেখল ধাক্কা খেয়ে লিকলিকের সে কি কান্না। কাঁদতে কাঁদতে এক সময় সে ফুরিয়েই গেল। মিতুর খুব কষ্ট হতে লাগলো। পাহাড় পেরিয়ে সোজা মাসির বাড়িতে এসে থামলো পুষি। মিতু দেখল, জানালায় মুখ বাড়িয়ে বসে আছে পুষির মাসি। চোখ দুটো জ্বলছে আগুনের গোলার মতো। পুষির সাথে মিতুকে দেখে গর্জন করে বলে উঠলো  "ছোট বোনটি, ওকে সাথে করে নিয়ে এসেছিস কেন? ওর নাম কি?"
  পুষি বলল  "মাসি, ওর নাম মিতু। ওর আমার মতো একটা লেজ দরকার। তাই তোমার কাছে নিয়ে এসেছি।"
  মাসি খুশি হয়ে বলল  "লেজ তো দরকার। কিন্তু লেজ দিয়ে কি করবি?"
  মিতু বলল  "দাও না মাসি একটা লেজ পরিয়ে। লেজ পরে আমি পুষির সাথে খেলা করব। পুষির সাথে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াব। খিদে পেলে মাছ,দুধ চুরি করে খাব।"
  মাসি বলল  "গাছে উঠতে না জানলে লেজ দিই না।"
  পুষি বলল  "মাসি মিতুকে লেজটা পরিয়ে দাও। ওকে আমি গাছে ওঠা শিখিয়ে দেব।"
  মাসি মিতুকে নিয়ে একটা ঘরে ঢুকল। কত লেজ সেখানে। বড় লেজ, ছোট লেজ। মোটা লেজ,রোগা লেজ। লম্বা লেজ, খাটো লেজ। লাল, কালো, সাদা, হলুদ কত রঙের বাহার তাদের। মাসি মিতুকে লেজ পছন্দ করতে বলল। মিতু সাদা রঙের একটা মোটা সোটা লেজ পছন্দ করল। মাসি হুক দিয়ে মিতুর পিছনে লেজটা লাগিয়ে দিল।
  লেজ পরে মিতুর কি আনন্দ। এবার তাকে আর পুষির পিঠে বসে যেতে হবে না। নিজেই হাওয়ার সাথে ভাসতে ভাসতে, মেঘের সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি পৌঁছে যাবে।
  দুজনে আকাশে উঠে গেল। ভোর হয়ে এসেছে। মেঘের সীমানায় কিছুতেই উঠতে পারছে না মিতু। পুষি চিৎকার করছে  "ওঠ, মিতু ওঠ।"
  মিতু আর উঠতে পারছে না। সূর্যের আলো তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
  মায়ের ডাকে বিছানায় উঠে বসল মিতু। জানালা দিয়ে রোদ্দুর এসে পড়েছে বিছানায় আর তার চোখে মুখে। পিছনে হাত দিয়ে মিতু চিৎকার করে উঠল  "আমার লেজটা গেল কোথায়?"

No comments:

Post a Comment