রেসের ঘোড়া || শক্তি পুরকাইত || সাহিত্যগ্রাফি - Songoti

রেসের ঘোড়া || শক্তি পুরকাইত || সাহিত্যগ্রাফি

Share This

আগের মত আতাউল মোল্লার শরীরটাও ভাল নেই । সেই যে ঘোড়া দৌড়ের কেরামতি তেমন দেখাতে ও পারে না । তবুও প্রতিবছর ডাক পড়ে , মিলনীপুর ছাউনির মাঠে ঈদের মেলাতে । আতাউল মানে দর্শকদের উল্লাস । ছেলে-মেয়েরা ওই একটা দিন অপেক্ষা করে থাকে , তার খেলা দেখবে বলে । ঈদ কমিটির উদ্দ্যোগতাদের বিশেষ অনুরোধে আবার সে ঘোড়াদৌড়ে অংশ নেবে । তাই সকাল থেকে ঘোড়াকে পরির্চ্চাতে ব্যস্ত । ঘোড়াকে স্নান করানো , ঘোড়ার গা মুছিয়ে দেওয়া । তারপর ভিন্ গাঁ পেরিয়ে প্রতিযোগীতার মাঠে । আতাউলের আজ সব কিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে । এর আগে কোনদিনও ঘটেনি । বুড়ো বয়সে সে কী আগের মত প্রথম হতে পারবে । প্রথম হলেই নগদ কুড়ি হাজার টাকা মিলবে । ' আল্লার কাছে সে কসম করে , হাসপাতালে ভর্তি ছেলেটাকে যেন সুস্থ করতে পারে । ঘোড়া নিয়ে মিলনীপুর ছাউনির মাঠে এসে দাঁড়ায় । সকালের রোদে সাদা ঘোড়ার গা যেন

: Advertisement :

রুপোর ঝালরের মত চক চক করছে । তার দৃঢ় বিশ্বাস , এ বছর ও পুরস্কার সে নেবে । খেলার মাঠে যে-যার ঘোড়া নিয়ে দাঁড়ায় । আতাউল ঘোড়া দৌড়ের জন্যে প্রস্তুত হয় । বাঁশি বেজে ওঠে । বাঁশির শব্দ তার বুকের ভিতর কন্ কন্ করে ওঠে । একে একে ঘোড়া ছুটেছে , তির বেগে । আতাউল সবার আগে আগে ছুটেছে । সে দেখতে পেল  ধুলোর মত কি যেন সামনে দিয়ে উড়ে যাচ্ছে । আতাউল কিছুই দেখতে পাচ্ছে না । ঘোড়া পা দুটো মুড়ে ধীরে ধীরে বসে পড়ল । মাঠের দর্শকের চিৎকার ভেসে আসছে । এতক্ষন সে বুঝতে পারল আর কোনদিনও প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে পারবে না । ঈদ কমিটির লোকেরা ছুটে গিয়ে ঘোড়ার মুখে জল দিল । ঘোড়ার ঘোলাটে চোখ তাকিয়ে থাকল খোলা আকাশের দিকে । মুহুর্তে শেষ নিশ্বাস পড়ল মাটিতে । আতাউল চিৎকার করে উঠল , রু-ক-সো -না ! তুই চলে গেলি ! আমি রেসের মাঠে কাকে নিয়ে ছুটব । দূরে আতাউল শুনতে পেল , একমাত্র ছেলের কন্ঠস্বর ' আব্বা আমি আগের মত হাঁটতে পারব তো । আগের মত রেসের মাঠে ছুটবো..' ! তার দু'চোখ বেয়ে নেমে এল জল নয় , শেষ বিজয়ের অকৃত্রিম ইচ্ছা।।

No comments:

Post a Comment