মাস্টারমশাই || রীণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায় || সাহিত্যগ্রাফি - Songoti

মাস্টারমশাই || রীণা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায় || সাহিত্যগ্রাফি

Share This
আমার বাবা ছিলেন
গ্রামের ইস্কুল মাস্টার,
ক্লাসে সংস্কৃত পড়াতেন,
ছেলেরা ডাকত—'পণ্ডিতস্যার',
ভয় পেত,ভালোওবাসত ৷

ক্লাসে থাকত কিছু দুষ্টু ছেলে,
পড়ার চেয়ে খেলায় যাদের
বেশি মন ;
বাবার মারের হাত থেকে
বাঁচত না কেউ ৷

একদিন হঠাৎ দুটি ছেলে
গোঁ ধরে রইলে পিঠ শক্ত করে,
বেধড়ক পিটিয়ে বাবা,
রাগ করে চলে গেলেন
ক্লাস ছেড়ে ৷
ওরা নির্বিকার—
বলল,'শোন,বাড়ি গিয়ে
সেঁক করিস,
স্যারের হাতে মলম ঘষিস,
আমাদের তো হয়নি কিছুই,
রোজ ব্যায়াম করি,
পেশি ফোলাই
শুধু শুধু ব্যথা পেলেন নিজেই ৷

নির্জলা সত্যি ওদের কথা—
বাবার হাতে দারুন ব্যথা—
বরফ ঘষে চলছে
ব্যথা কমানোর চেষ্টা ;
'পরের ছেলে,কেন এত মারধোর?'
মায়ের কথা শুনে বাবা,
যন্ত্রণায় কাতর,
'ওদের যে নিজের ছেলেই ভাবি,
মুখ্যু হলে,
শেষ হয়ে যাবে সবই!'

মার খাওয়া সেই বাঁদর ছেলেরা,
(আজ) কেউ ডাক্তার,
কেউ বা মোক্তার;
স্যারের শাসনে মেশানো আদর,
ভোলেনি কেউ,
শ্রদ্ধাও যায়নি চলে ৷

আজও মাস্টারমশাই
ছাত্র পড়ান,
শাসনে আদরে শৃঙ্ক্ষলা শেখান;
জামা পরান,জুতা পরান
মিডডে—মিল খাওয়ান,
পরীক্ষা নেন,
রাত জেগে খাতা দেখেন ৷
ছাত্রের সফলতায়
পুলকিত মাস্টারমশাই,
আজও গর্বিত হন—
অবসরের জমানো টাকা
ছাত্রের মঙ্গলে করেন দান ৷
তবে দুষ্টু ছেলেকে
শাসন করতে গেলে
মাস্টারমশাই হয়ে যান
দুঃশাসন ৷

আসলে—
ছেঁড়াছাতা, তালিমারা জামার
মাস্টারমশাই যে আজ 
বেতন পান!
এতদিনে জানা গেছে,
মাস্টারমশাই—এরও খিদে আছে,
ঠিক অন্য মানুষদের মতই!

তাই কি পান থেকে চুন খসলে
সবাই রেগে আগুন!
শিক্ষকের অপরাধ,
ঠাঁই পায় খবরের কাগজের
প্রথম পাতায়;
আর শিক্ষকের আত্মত্যাগ—
কোনমতে খুঁজে নিতে হয়
হয়ত বা শেষের পাতায়!

No comments:

Post a Comment