গুরু গ্রন্থ সাহেবের বাংলা সংস্করণ প্রকাশ পাঁচটি খন্ডে - Songoti

গুরু গ্রন্থ সাহেবের বাংলা সংস্করণ প্রকাশ পাঁচটি খন্ডে

Share This
বার্তা প্রতিবেদন, কলকাতাঃ ভারতরত্ন, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি গুরু গ্রন্থ সাহেবের বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করলেন। পাঁচটি খন্ডে এই ধর্মগ্রন্থের বাংলা সংস্করণ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের সোলানের দাদা লছমন চেলারাম। গুরু নানক দেব জিয়াতের ৫৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আয়োজন জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের আধ্যাত্মিক পাঠ প্রোগ্রাম (‌ইউজিসি–র ভ্যালু এডুকেশন প্রোগ্রামের অংশ)‌ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রণব মুখার্জি। 



পন্ডিত দীপক মিশ্র গোষ্ঠীর কীর্তন দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সঙ্গীতানুষ্ঠানে যোগ দেন লছমন চেলারাম, পুনীত কৌর, ১৪ বছরের শিল্পী প্রিশা কৌর কাটিয়াল।

কলকাতার ১০০টি পুরনো পাঠাগার কর্তৃপক্ষের হাতে গুরু গ্রন্থ সাহেবের বাংলা সংস্করণ তুলে দেওয়া হয়। জেআইএসইউ–র তরফে জানানো হয় আগ্রহী কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের অফিস থেকে পরবর্তী সময়ে এই ধর্মগ্রন্থের বাংলা সংস্করণ সংগ্রহ করতে পারবে।

অনুষ্ঠানের সুর ছিল ‘কুদরত কে সব বন্দে‌’ (আমরা সবাই প্রকৃতির সন্তান‌)‌। যা নেওয়া হয়েছে গুরু গ্রন্থ সাহেব থেকে। যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে মানবতার কথা বলা হয়েছে। সবাই একসঙ্গে থাকার কথা বলা হয়েছে। ৬ জন গুরু, ৪ জন সন্ত, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে ১৫ জন ভগতের বাণী এক হয়েছে ১৪৩০ পাতার এই ধর্মগ্রন্থে। সেইসঙ্গে ১১ জন চারণ কবি মূলগত সত্য এবং ধারণাগুলিকে একত্রিত করে নিখুঁতভাবে বা স্পষ্টভাবে বিক্ষিপ্তভাবে বিরাজমান সময়ের মাধ্যমে প্রাচীনকালের মাধ্যমে আত্মত্যাগের মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে পৌঁছোনোর ক্ষেত্রে গুরু নানকের দৃষ্টিভঙ্গি করথা তুলে ধরেছেন।

রুশবীর সিং বলেন, ‘বাংলার সঙ্গে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ। শুরু থেকে শিখ সম্প্রদায়ের শিক্ষা (‌গুরুবাণী)‌ এখানে প্রচলিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ এই ধর্মগ্রন্থ এবং কীর্তন থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছিলেন। বীরভূমের বিখ্যাত ভগত জয়দেবের লেখা এই গ্রন্থে রয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভু এবং গুরু নানক ছিলেন সমসাময়িক। তাঁরা দুজনেই ভক্তি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। 

৪ বছরের বেশি সময় ধরে অনুবাদের কাজ করা হয়েছে। এ কাজে যুক্ত ছিলেন দুজন অনুবাদক। তাঁরা হলেন চায়ন ঘোষ এবং ঝুমা ঘোষ। দাদা চেলারাম পাবলিকেশন তাঁদের এ কাজে নিয়োগ করেছিল। এই প্রকাশনার মালিক লছমন চেলারাম। তিনি একজন সিন্ধি পণ্ডিত এবং কীর্তন শিল্পী। তাঁর প্রয়াত পিতৃদেব দাদা চেলারামের কাছ থেকে তিনি গুরু গ্রন্থ সাহেব সম্পর্কে জানতে পারেন। এই ধর্মগ্রন্থে বলা মানবপ্রেমের বিভিন্ন দিক তিনি সবার কাছে তুলে ধরতে আগ্রহী হন। তাই বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের কাজে হাত লাগানো হয়। 

জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, জেআইএস গ্রুপের এমডি সর্দার তরণজিৎ সিং এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যাঁর বেশ কিছু অবদান রয়েছে সেই প্রয়াত সর্দার জোধ সিংয়ের জীবনী তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোধ সিং জেআইএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা–চেয়ারম্যান ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধান প্রশাসক স্বামী সুপ্রিয়ানন্দ, বাগবাজার গৌড়ীয় মঠের সভাপতি সন্ন্যাসী মহারাজ ভক্তি সুন্দর, রাজ্যসভার সদস্য সর্দার তরলোচন সিং, অর্জুন পুরস্কার প্রাপক, ক্রীড়াবিদ সর্দার গুরুবক্স সিং। ছিলেন জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার বিদ্যুৎ মজুমদার, জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বি সি মাল, কলকাতার শিখ কালচারাল সেন্টার, জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আধ্যাত্মিক পাঠ প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা, পরামর্শদাতা ইউনিসেফের ইন্টারফেইথ অ্যালায়েন্সের কোর গ্রুপের সদস্য টি এস মদন। 

সর্দার স্বরণ সিংয়ের প্রণীত ছবির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি এখন আমেরিকার চিকাগোর বাসিন্দা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া ধর্মপ্রাণ শিখ সেনাদের ছবি দেখার সুযোগ হয়েছিল। এগুলি ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে সংহ্রহ করা হয়েছে। কষ্টের সময় কেমন করে বেঁচে থাকা যায়, যার সাক্ষ্য সারাগরীর বিখ্যাত যুদ্ধেও দেখা যায়, সেগুলিই ফিরে আসে যেন এই সব ছবিতে।

No comments:

Post a Comment