স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপাল গাঙ্গুলী প্রয়াত - Songoti

স্বাধীনতা সংগ্রামী গোপাল গাঙ্গুলী প্রয়াত

Share This
চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য, কলকাতাঃ চলে গেলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী আগস্ট আন্দোলনে ঢাকা কারাগারে বন্দী কমিউনিস্ট নেতা গোপাল গাঙ্গুলী। ইনিই ছিলেন আগস্ট আন্দোলনে কারাবরণকারী বিপ্লবীদের মধ্যে শেষ জীবিত বিপ্লবী। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বছর তিনেক আগে তাঁর পত্নীবিয়োগ হয়। তাঁর দুই কন্যা ও এক পুত্র ও নাতিনাতনীরা বর্তমান। গোপালচন্দ্র গাঙ্গুলীর জন্ম ১৯২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর। দেশ ছিল অধুনা বাঙলাদেশের বিক্রমপুরের কাননিসার। ছোটবেলা কেটেছে সিরাজগঞ্জে। দেশভাগের অনেক আগেই কলকাতায় চলে এসেছিলেন। রিপন কলেজে পড়ার সময় নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত হন, রাজ্য নেতৃত্বে আসেন। ছাত্র জীবনে গীতা মুখোপাধ্যায়ের সহকর্মী ছিলেন। 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে  কলকাতায় বোমা পড়লে কলেজগুলি বন্ধ হয়ে যায়। রিপনের ছাত্রদের চলে যেতে হয় বাঙলাদেশের মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজে। আগস্ট আন্দোলন শুরু হয়। উনি কলেজে কমিউনিস্ট ছাত্র নেতা হিসাবে পরিচিত। সেই অবস্থাতেই উনি এক জনসভায় আগস্ট বিপ্লবের পক্ষে ভাষণ দেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রাখে। সেখানে তিনি ছিলেন বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা জীতেন কুশারীদের সেলে বন্দী। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বিশেষ স্মারক দিয়ে সম্মানিত করে।
দু বছর বন্দিদশা কাটানোর পর কলকাতায় ফেরেন ১৯৪৪-এ। লাভ করেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপ। এমন ছাত্রদের ভর্তি হয়ে পড়াশোনার জন্য বঙ্গবাসী কলেজ খোলা হলে তিনি তাতে ভর্তি হয়ে স্নাতক হন। এম এ পড়ার জন্য ভর্তিও হন, কিন্তু পার্টির নির্দেশে রেলের পরীক্ষা দেন ও টিকেট পরীক্ষকের চাকরি পান। হাওড়া ডিএস অফিসে কর্মরত অবস্থায় ১৯৮১র ডিসেম্বরে অবসর নেন ও পার্টির নানা কাজে নিজেকে নিয়োগ করেন।
১৯৬২ সালে চিনের আগ্রাসনের সময় ভারত রক্ষা আইনে গোপাল গাঙ্গুলীকেও গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘকাল বিনা বিচারে বন্দী থাকার পর মুক্তি পান। আটের দশকের শেষ দিকে তিনি পার্টির নির্দেশে কালান্তর দৈনিকের সঙ্গে যুক্ত হন। রাজনীতির ক্ষেত্রে তাঁর উদারমনস্কতা সকলের প্রশংসা পেত। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও অতুল্য ঘোষের সঙ্গে পরিচয়ের দিনে তাঁর প্রজ্ঞায় মুগ্ধতার কথা অকপটে বলতেন।
পার্টিজীবনে সমরেশ বসু, হেমাঙ্গ বিশ্বাস থেকে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিতাভ দাশগুপ্ত, সৌরী ঘটকদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কালান্তরের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রভাত দাশগুপ্ত, সুনীল মুন্সী, নৃপেন বন্দ্যোপাধ্যায়দের প্রিয় ছিলেন -- কারও ভাই, কারও দাদা। তাঁর মধুর ভাষণের জন্য তাঁকে 'গোল্ডেন টাং' বলা হত। তাঁর গদ্য লেখার অনবদ্য মুন্সিয়ানা ছিল, যার প্রমাণ রয়েছে তাঁর লেখা "আগস্ট আন্দোলনে কারাবাসের দিনগুলি" বইতে। সাপ্তাহিক কালান্তরে কলকাতার বিষয়ে তাঁর লেখাগুলিও এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

No comments:

Post a Comment