আচ্ছা, একটা পদবী আছে, পোঁদ। মালদার সাথে তার কি সম্পর্ক, কেউ জানেন? - Songoti

আচ্ছা, একটা পদবী আছে, পোঁদ। মালদার সাথে তার কি সম্পর্ক, কেউ জানেন?

Share This

চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য, কলকাতাঃ অতীতে পৌণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রবর্ধন বলে একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নাম ছিল পুণ্ড্র (পরে অপভ্রংশ হয়ে ‘পোঁদ’) খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতক, আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগের ঐতরেয় ব্রাহ্মণে অন্ধ্র, শবর, পুলিন্দ ও মুতিব জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে স্বতন্ত্র ‘পুণ্ড্র’ জাতিগোষ্ঠীর উল্লেখ আছে। অন্যান্য প্রাচীন সাহিত্যেও পুণ্ড্র আছে। এরা ভূমিপুত্র, আদিবাসী, তাই বেদ-পন্থীরা পুন্ড্র জাতি ও তাদের অঞ্চলকে অপবিত্র গণ্য করতো। 

নানা জায়গায় প্রাপ্ত প্রাচীন লেখগুলি থেকে জানা যায়, পুন্ড্র ক্রমশ একটি রাষ্ট্র হয়ে যায়। আনুমানিক তৃতীয় খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে মৌর্য যুগের মহাস্থান ব্রাহ্মীলিপির আবিষ্কারের মাধ্যমে করতোয়া নদীর ডানদিকে বগুড়া জেলার মহাস্থানের সঙ্গে তৎকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র পুন্ড্রনগরের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে। পৌণ্ড্রবর্ধনের দক্ষিণে ছিল গঙ্গা (বর্তমানে পদ্মা), পশ্চিমেও গঙ্গা, পূর্বে করতোয়া ও যমুনা। বাংলাদেশের রাজশাহী, বগুড়া, দুই বাঙলার দিনাজপুর, উত্তরের বরেন্দ্রভূমি ছিল পৌণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্গত। গুপ্ত সম্রাট বুধ গুপ্তের আমলে (আনু. ৪৭৬-৯৪ খ্রি.) পুণ্ড্র-র উত্তরসীমা  ‘হিমাবচ্ছিখর’ (হিমালয়) পর্যন্ত বিস্তৃত বলে দামোদরপুর তাম্রশাসনে উল্লেখ আছে। 
তখন শাসন পরিচালনার জন্য ভূখণ্ডের বিন্যাস যেভাবে হয়েছিল, আজও তাঁর থেকে খুব বেশি এগোয়নি শাসন পদ্ধতি। খ্রিষ্টীয় ৩২০ থেকে ৫৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কাল হল গুপ্ত যুগ। এই সময়ে পুন্ড্রবর্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিভাগ বা ‘ভুক্তি’ (এখনকার হিসাবে রাজ্য বা প্রদেশ), তাঁর অধীনে ছিল ‘বিষয়’ (এখন যেমন জেলা)। উত্তরবঙ্গ থেকে পাওয়া গুপ্ত যুগের নানা লেখ-এর বিশ্লেষণে স্পষ্ট যে, পুন্ড্রবর্ধন কয়েকটি জেলায় বিভক্ত ছিল। জেলাগুলি (বিষয়) আবার কয়েকটি করে বীথি ও মন্ডলে (মহকুমা ও ব্লক) বিভক্ত ছিল। গুপ্ত সম্রাটে নিযুক্ত একজন উপরিক (প্রদেশ রক্ষক) বা উপরিক মহারাজের (প্রদেশ শাসক) উপর ভুক্তির শাসনভার থাকতো। 
গুপ্ত যুগকে স্বর্ণসময় বলা হলেও পৌন্ড্রর বিস্তৃতি ও সমৃদ্ধি গুপ্ত যুগের পর। ৭৫০ থেকে ১১৬৫ পর্যন্ত ২০ প্রজন্মে পাল বংশ পৌণ্ড্র সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। এরপর ৯০০-১০৫০ পর্যন্ত রাজত্ব করে চন্দ্র বংশ। মহারাজা ছিলেন ত্রৈলোক্যচন্দ্র, শ্রীচন্দ্র, কল্যাণচন্দ্র, লড়হচন্দ্র ও গোবিন্দচন্দ্র। গোণ্ড, সমতট, হরিকেলের অংশে তাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন। তারপর আসে সেন বংশের রাজত্ব। ১১৭০সালে সামন্তসেনের প্রতিষ্ঠিত বংশে হেমন্ত সেন, বিজয় সেন, বল্লাল সেন, লক্ষ্মণ সেন, কেশব সেনরা রাজত্ব করেছেন ১২৩০ পর্যন্ত।
চালুক্যকন্যা রামাদেবীর স্বামী বল্লাল সেনই পাল রাজাদের থেকে গৌড় দখল। তাঁর আগ পর্যন্ত এই এলাকাটি ছিল পাল রাজাদের, যদিও নাম তখন গৌড় ছিল না। এই এলাকা দখল করে লক্ষ্মণ সেনের নামে শহরের নামকরণ করেন লক্ষ্মণাবতী। বল্লালের পর লক্ষ্মণ সেন রাজ্য বিস্তার করেছিলেন আসাম-ওড়িশাতেও। রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান নবদ্বীপে। ১২০৪-এ তুর্কি যোদ্ধা বক্তিয়ার খিলজির সামান্য কয়েকজন দুর্ধর্ষ সৈনিক নিয়ে আসছেন জানতে পেরে কার্যত কোনও যুদ্ধ না করেই লক্ষণ সেন পালিয়ে যান বলে শোনা যায়, যদিও ইতিহাস বলে, তিনি যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পালিয়েছিলেন। খিলজি লক্ষণাবতী শহরে রাজত্ব কায়েম করেন। তারপরেও নবদ্বীপে কিছু বছর ছিল সেন বংশ। ১২২৫-১২৩০ পর্যন্ত শেষ রাজা ছিলেন কেশব সেন। 
এই যে রাজাদের কথা বললাম, এর মধ্যে চন্দ্র বংশের শ্রীচন্দ্র-র ধুল্ল তাম্রশাসনে ‘পুন্ড্র’ ভুক্তির খদিরবিল্লি বিষয়ের বল্লিমুন্দ খন্ডলে (অধুনা মাণিকগঞ্জ জেলার বল্লিসুদ) একটি ভূমিদানের উল্লেখ রয়েছে। 
লড়হচন্দ্রের ময়নামতী ও দামোদরদেবের (১২৩৪ অব্দ) মেহর তাম্রফলক থেকে জানা যায় যে, সমতট মন্ডল পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির অন্তর্গত ছিল। পরে সমতট আলাদা স্বাধীন রাজ্য হয়। পাল-সেন যুগের ভূমিদানের দলিল থেকে প্রমাণ, আজ যে অঞ্চলের মানুষকে ‘বাঙালি’ বলেই মানতে চাইছে না কেন্দ্রীয় এন আর সি, উত্তর পূর্ব প্রান্তের সেই সিলেট ও বরাক অঞ্চলও পুন্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। “পৌন্ড্রবর্ধনভুক্ত্যন্ত পাতিবঙ্গে বিক্রমপুরভাগে’ বলে উল্লেখ পাওয়া যায়, যার অর্থ পূর্ববঙ্গের প্রায় সমগ্র অঞ্চলের সঙ্গে সমবিস্তৃত বঙ্গ প্রশাসনিক একক পুন্ড্রবর্ধনে সংশ্লিষ্ট ছিল

No comments:

Post a Comment