"ইন্সুট্রুমেন্টের মধ্যে একটা হিলিং পাওয়ার আছে" - মিউজিক ডিরেক্টর জুবিন মিত্র - Songoti

"ইন্সুট্রুমেন্টের মধ্যে একটা হিলিং পাওয়ার আছে" - মিউজিক ডিরেক্টর জুবিন মিত্র

Share This

 

লকডাউনে নাজেহাল প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রি। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি কেমন আছে? সেটি জানতে কথা বলে নিয়েছিলাম এ'কালের বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি'র পরিচিত মুখ জুবিন মিত্রে'র সাথে .....

মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কিভাবে আসা ?

উত্তর - মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিতে আসাটা একটু অদ্ভুদ একটা স্টোরি। আমি উদয়শঙ্কর ডান্স স্টাইলে ছিলাম প্রায় ১৫-১৬ বছর। তো ওই ডান্স স্টাইলটা এমন একটা অদ্ভুদ ডান্স স্টাইল যেখানে কিনা আামাদেরকে শুধুমাত্র নাচ শেখানো হতনা। সেখানে এক্সপ্রেশন, কি করে নিজেকে প্রেজন্ট করতে হয়, স্টেজ প্রেজেন্টস, তারপর মিউজিকটা কীভাবে তৈরি হচ্ছে, ওটা অল ইন ওয়ান একটা ক্রিয়েটিভ ফ্রম যেখান থেকে কিনা আমার ডান্স, মিউজিক সম্বন্ধে আরও বেশি ভালবাসা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সেখান থেকেই মিউজিকের প্রতি আমার আলাদা একটা ন্যাক তৈরি হতে থাকে।তারপর আমরা একটা ব্যান্ড তৈরি করি। নাম দেওয়া হয় লাভের দানা। এটা একটা টু পিস ব্যান্ড ছিল। সেখানে আমি এবং প্রাজ্ঞ দত্ত পারফর্ম করতাম। তারপর মিউজিকের জায়গা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলামপ্রফেশনাল ফিল্ডে ঢুকে গিয়েছিলাম। হঠাত্ করেই গত বছর লকডাউনে সিদ্ধান্ত নিলাম, অনেকগুলো নিজের ভাবনা চিন্তা রয়েছে, সেগুলো ধীরে ধীরে ডেভেলপ করা যাক। এই ভাবেই আবার গানের দুনিয়ায় যাত্রা শুরু। এবং এখন পর্যন্ত আমার কম্পোজিশনে প্রায় এগারোটা রিলিজ হয়ে গেছে। যেখানে বিভিন্ন  মানুষেরা যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন। তার মধ্যে দুটো ইন্সট্রুমেন্টাল আছে। সেখানে প্রচুর গুণী মানুষেরা বাজিয়েছেন। আামার অনেক কম্পোজিশনে মল্লার কর্মকার, প্রাজ্ঞ দত্ত, তারপর গুরজিত সিং, এনারা গান গেয়েছেন। এবং কিছু নিউ কামারও গান গেয়েছেন। যেগুলো রিলিজ হয়েছে আশা অডিও, হামারা মিউজিক, টাইমস মিউজিকের মতো বিভিন্নে প্ল্যাটফর্মে। এইভাবে পথ চলাটা শুরু হয়েছে। আর সত্যি কথা বলতে সবার সাপোর্ট  না থাকলে পথ চলার এই প্রেরণাটা পেতাম না। আর সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দিয়েছে আমার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দত্ত মিত্র। ও সবসময় বলত, "তুমি জাস্ট এগিয়ে যাও। তুমি কর, আমি আছি।" এই সাপোর্টটা খুব পেয়েছি ওঁর কাছ থেকে। এই ভাবেই শুরু হয়। এর মধ্যে দুটি গানের কম্পোজিশন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এখনও পর্যন্ত। বিভিন্ন কাগজে, কলমে লেখাও হচ্ছে। তারমধ্যে একটা ইউটিউবে খুব ভাল সাড়া দিয়েছে, আর একটা কিছু মাস আগেই মুক্তি পেয়েছে। উদয়শঙ্কর ও অমলাশঙ্করের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা ইন্সট্রুমেন্টাল কম্পোজিশন মুক্তি পেয়েছে। কথাবার্তা চলছে। একটা অন্য ফর্মের মিউজিক আসছে। যেটা আমি নিজেও অনুভব করছি।  একটা অন্য অডিয়েন্স তৈরি হচ্ছে। আগামীতে কিছু জিনিস আসছে। অন প্রসেসে চলছে পুরো বিষয়টা। আর সত্যি কথা বলতে, আমার কাছে এটা পরিষ্কার, একটা ভিজ্যুয়াল, একটা অডিও আমার কাছে ভেরি মাচ কানেকটেড। আমি যখন একটা ছবির ভাবনার বিভিন্ন দৃশ্য ভাবি, সেটার সাথে আমি অডিওটাকেও ভেবে নিতে পারি,  এভাবে আমার অডিওটা দাঁড়াচ্ছে বা এভাবে আমার গানটা দাঁড়াচ্ছে। আমার কাছে এই দুটো বিষয় বুঝে কাজ করতে খুব একটা অসুবিধা হয়না। এই হচ্ছে আমার ইন্ডাষ্ট্রিতে পা দেওয়ার ছোট্ট পদক্ষেপ।

মিউজিক কী মানসিক অবসাদ দূর করে?

মিউজিক অবশ্যই এমন একটা ফিল্ড যেখানে আমার মনে হয় যে, বিভিন্ন এলিমেন্টস যেহেতু আছে সেখানে তো মানুষ যখন কোনও গান বা কোনও ইন্সুট্রুমেন্টাল শোনে, কেউ কোথাও নিজেকে সেই জায়গায় রিলেট করতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কিছু গান যেমন আমার জীবনের সঙ্গে রিলেট হয়ে যায়। কিছু মিউজিক আমাকে ভীষন ভাল রাখে, কিছু মিউজিক আমাকে একটা অন্য ফেসে ভীষন ভাবিয়ে তোলে। তাই আমার মনে হয়, দিনের শেষে বা দিনের শুরুতে মিউজিক শোনাটা খুব দরকার। তবে বিভিন্ন মানুষের সাইকোলজি বিভিন্ন রকম। তাই যার কাছে একটা গান স্যাড লাগছে, সেটা অন্যজনের কাছে নাও লাগতে পারে। তাই মিউজিক একটা বিশাল বড় জায়গা সেটা যদি ইন্সুট্রুমেন্টাল হয় তাহলে সেটা সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়াত মতো অবস্থা হয় আমাদের। সবার মধ্য দিয়ে সেটাকে রিলেট করে। হ্যাঁ, অবশ্যই সেটা যখন গান হয়ে যায়, তার কথা বা লিরিক্স অনেকটা সাহায্য করে বুঝতে গানটা কোন মুডের সঙ্গে যাচ্ছে। সব ইন্সুট্রুমেন্টের মধ্যে একটা হিলিং পাওয়ার আছে। আর বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে সাধারণ মানুষ অনেকটাই অবসাদে ভুগছেন, কিভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটা নিযে ভবনা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাই আমি উপদেশ দেব যে, মানুষ যদি একটু গান শোনে, মেডিটেড করে তাহলে পজিটিভ থাকতে অনেকটা সাহায্য করবে মিউজিক।


বর্তমানে আপনি কী কাজ করছেন?

বর্তমানে অনেকগুলো প্রজেক্ট হাতে আছে। বিভিন্ন শিল্পীরা আমার সাথে কানেকটেড হয়ে কাজ করতে চাইছে। যা আমাকে খুব মোটিভেটেড করে।  এটা ভেবে যে মানুষ অন্য জঁনার বা অন্য ধরনের মিউজিক শুনতে চাইছে বা শিল্পীরা কাজ করতে চাইছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বর্তমানে কিছু আপকামিং আসছে, আনরিলিজড এখনও। অন প্রসেস চলছে। গৌরব সরকারের কিছু কাজ আসছে আমার লেখা সুরে। গুরজিত সিং গেয়েছেন কিছু আমার লেখা সুরে। প্রাজ্ঞ দত্তের কিছু গান আসছে আমার লেখা সুরে। দুর্নিবারের সঙ্গে কাজের কথা চলছে।  আর কিছু মুক্তি পেতে চলেছে। যেমন, একটা নজরুল গীতি। যেটা কিনা  দুম করে সবাই ট্রাই করেনা। যেটা ট্রাই করেছি। একটু নিউএড সাউন্ডটাকে রেখে বাট এস্থেটিকটা সেম বজায় যাতে থাকে সেটা ভেবে। এটা মুক্তি পেতে চলেছে কিছু দিনের মধ্যে হামারা মিউজিক থেকে। আরও কিছু রবীন্দ্র সঙ্গীতও আসছে। আপাতত বর্তমানে এই কাজই রয়েছে। কিছু ইন্সটুমেন্টাল প্ল্যানিং চলছে বিভিন্ন ধরনের ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স ফর্মকে সামনে রেখে। এই বছর হাতে যা কাজ আছে তাতে সিডিউল পুরো প্যাকড।


আপনার লকডাউন কিভাবে কাটছে?

লকডাউটা একটু ইন্ডেরেস্টিং আমার কাছে। কারণ গত বছরই আমি বিয়ে করেছি। আমি থাকি চেন্নাইতে। আমার স্ত্রী ছিল এখানে। এবং সে সন্তানসম্ভবা ছিল। পুরো লকডাউনটা একটু প্যানিক করছিলাম কোনও সমস্যা হলে কি ভাবে কি হবে। কিন্তু আমার স্ত্রী প্রচন্ড সাপোর্টিভ। সে নিজেই নিজের খেয়াল রেখেছিল খুব সুন্দ করে। আমাকে সবসময় মিউজিকের জন্য অনুপ্রেরণা দিত। বলত, "না না তুমি তোমার কাজটা কর। " ফলে লকডাউনে বসে যেটা হয়েছে,  প্রচুর গান লেখা হয়েছে, প্রচুর সুর করা হয়েছে। যেটার জন্য হচ্ছে এই বছরের অনেক গুলো কাজ আগে থেকে প্ল্যান এমনকী আগামী বছরের কিছুটা কাজ এগিয়ে রয়েছে। লকডাউনে অনেকটাই প্ল্যান হয়েছে। এই লকডাউনটা আরও বেশি ইন্টারেস্টিং হয়েছে কেননা, অনেক গুলো চ্যালেঞ্জ রিলিজড হয়েছে যেগুলো কিনা হতে পারছিলনা ভিডিও শ্যুট করতে না পারার জন্য। সেগুলো অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে, ম্যানেজ করে একটা অন্য অভিজ্ঞার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আর এই লকডাউনেই ২৪ জুন আমার মেয়ে হয়। তার সাথে সাথেও কাজটা চলেছে। কারণ আমার স্ত্রীর একটাই কথা- "কাজটা তুমি কর। তাহলে তোমার ভাবনাচিন্তা অনেক বেটার থাকবে।" তাই  স্ত্রী সন্তানসম্ভবা থাকাকালীন যে সময়টা পেরিয়েছি সেটা নিয়ে একটা গান লেখা হয়েছে যেটা হামারা মিউজিক থেকে ৯জুন মুক্তি পায়। সেই গানটা পুরোপুরি একটা মেয়েকে কেন্দ্র করে ছিল যে একটা মেয়ে শিশু থেকে যখন মা হচ্ছে আবার তাঁর সন্তান হচ্ছে, এক মাতৃত্বের গল্প নিয়ে গান। তাই এই লকডাউন কিছুটা অন্যরকম আমার কাছে। অবশ্যই অনেক এক্সপেরিয়েন্স হচ্ছে, অনেক ফেস যাচ্ছে, আপস অ্যান্ড ডাউনসড, ব্যালেন্সড। সত্যি কথা বলতে, মিউজিক আমাকে অনেকটা সাহায্য করেছে আর আমার স্ত্রীও সব পরিস্থিতিতে আমার সাথে রয়েছে এখনও। আসলে লকডাউনটা নিজেকে চিনতে আরও সুবিধা করেছে।

বর্তমানে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কি রকম অবস্থা?

এখন একটা জিনিস অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে যে, এখনকার দিনে ভাল গান তৈরি হচ্ছে না, বা ভাল গান শুনতে পাচ্ছিনা। এখনও যদি কোনও পুরনো গান শুনি সেটার সাথে রিলেট করতে পারি খুব ভালভাবে। কিন্তু নতুন গান কিছু আসছে না বা ভাল কাজ হচ্ছেনা এইরকম একটা ভাবনা মানুষের মধ্যে আছে। সেক্ষেত্রে, আমার নিজস্ব চিন্তাধারা হচ্ছে যে, হয়তো গান গুলো মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছেনা। এবার কেন পৌঁছাচ্ছেনা সেটা অদ্ভুদ একটা প্রশ্ন নিজের কাছেই থেকে যায়। যে সব মিউজিক লেবেলরা রয়েছেন তাঁরা কি তাদের কাজের প্রতি সত্ নয়? সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করা একটা আলাদা চ্যালেঞ্জ। এবং সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি খুব ভাগ্যবান যে আমার আশপাশে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা খুবই সাপোর্টিভ। যা এই স্বাধীনভাবে কাজ করতে সাহায্য করছে। সবাই একসাথে মিলে একটা কাজ করা। মিউজিক তৈরি করা। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হচ্ছে।অনেক ভাল ভাল কাজ হচ্ছে। লোকের কাছে পৌঁছানোটা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে কিন্তু সেগুলো এতটাই বিজনেস অরিয়েন্টেড হয়ে গেছে যে সিলেকটিভ কিছু জিনিস ছাড়া কেউ কাউকে সাপোর্ট করেনা। তাই সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মিউজিকটা একটু লড়াই করেই করতে হচ্ছে।


আপনি পাঠককে কিভাবে সচেতন করতে চান?

আমার গান বা আমার মিউজিক বা আমার ইন্সট্রুমেন্টাল কম্পোজিশনের মধ্য দিয়ে যেটা হয় হচ্ছে, আমি খুব প্রেজেন্ট বা সিচুয়েশন বেসড বা কনসেপ্ট বেসড জিনিস তৈরি করি। সেই জায়গা থেকে যেমন কিছু দিন আগে আমার একটা কাজ বেরিয়েছিল, যেখানে রোড সেফটির ওপর একটা গান তৈরি হয়েছিল। সেটা আমাক এক খুব কাছের এক মানুষ বাইক দুর্ঘটনায় মারা যান। সেই একটা ভাবনা নিয়ে গান তৈরি হয়। আর সচেতনতা হচ্ছে সব নিজের ওপর। সেই জায়গা থেকে শ্রোতাদের কাছে একটাই অনুরোধ, আমার গান বলে না, একটু সময় করে যদি সবার গান একটু শোনার সুযোগ থাকে, বিশেষ করে আমার মতো যাঁরা নতুন কাজ করছেন, তাহলে হয়তো কিছু জিনিস পাওয়ার জায়গা থাকতে পারে।কারণ সব মানুষের বিভিন্ন ভাবনা চিন্তা আছে, তারা নিজেদের ভাবনাচিন্তাকে রাখছে সামনে। তাই এটাই বলব যে, কাউকে দোষ দেওয়ার থেকে, কোনও মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিকে দোষ দেওয়ার থেকে আমার মনে হয়, যারা দর্শক বা শ্রোতা রয়েছেন তাদের বলছি সেই জায়গা থেকেই ধরুন, ফেসবুক বা ইউটিউবে স্ক্রোল করছেন যদি কিছু পান তাহলে গান দেখে না শুনে, যদি গান শুনে তারপর দেখেন তাহলে ভাল। কারণ এখন যুগটা একদমই পাল্টে গেছে। গান দেখে আমরা পছন্দ করি বা লাইকস দেখে পছন্দ করি গানটা কেমন। তাই সেই জায়গায় সব গান শোনা খুব ডিফিকাল্ট। তাও যদি একটু এফোর্ট নিয়ে ছোট ছোট করেও শোনা যায় তাহলে নতুন স্রোতের যে ভাবনা গুলো আসছে সেগুলোকে বোঝার জায়গাটা তৈরি হতে পারে। তাই দর্শকদের কাছে একটাই অনুরোধ, যারা অরজিনাল কাজ করছেন সবার গান একটু শুনুন। তাঁদের প্রেরণা দিন। গান হচ্ছে। বাংলায় গান সবসময় ভালই হয়। আর সাথে থাকলে অনেক অনেক ভাল গান এমনই তৈরি হবে।

No comments:

Post a Comment