‌সিওপিডি–‌র সঙ্গে লড়তে তাকে জানুন ফুসফুসকে করে তুলুন স্বাস্থের প্রাণকেন্দ্র - Songoti

‌সিওপিডি–‌র সঙ্গে লড়তে তাকে জানুন ফুসফুসকে করে তুলুন স্বাস্থের প্রাণকেন্দ্র

Share This

 চিকিৎসা পরিভাষায় রোগটার নাম ‘‌ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’‌। সংক্ষেপে সিওপিডি। 

এই শব্দটায় শুধু একটা মাত্র রোগ বোঝায় না, ব্যাপক অর্থে এটা ফুসফুসের এক ক্রনিক রোগ, যাতে ফুসফুসে বাতাস যাওয়া–‌আসা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। সিওপিডির যে লক্ষণটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তা হল শ্বাসকষ্ট, মানে বাতাস প্রয়োজন, সঙ্গে স্থায়ী কাশি। সিওপিডির কাশি ধূমপায়ীদের নিছক কাশি নয়। উল্টে তেমনভাবে ধরা না–‌পড়া এই সমস্যা বাড়তে বাড়তে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। বিশ্বে সিওপিডি সমস্যা সবচেয়ে বেশি চীনে, তারপরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তবে ২০১৬–‌র গ্লোবাল বার্ডেন অভ ডিজিজেস–‌এর সমীক্ষা অনুযায়ী, সিওপিডির কারণে মৃত্যুর সংখ্যায় কিন্তু ভারত চীনকে পিছনে ফেলে এক নম্বরে।

শারীরিক লড়াই, শ্বাসকষ্ট, একটু–‌আধটু চলাফেরা করতে গিয়েও দম বেরিয়ে যাওয়া এবং রোজকার সাধারণ কাজও করতে না পারা— প্রভাব ফেলে মনে। টলিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস, মর্যাদা এবং জন্ম দেয় মৃত্যুর শঙ্কা। এই হল একজন সিওপিডি রোগীর জীবনের রোজনামচা, প্রতিদিনই চলে বেঁচে থাকার লড়াই। শুধু প্রাণপণে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টাই নয়, সিওপিডি রোগীর কাছে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার উপায় বের করাও বড় চ্যালেঞ্জ। যখন লক্ষণগুলো আরও খারাপ আকার নেয় বা নতুন লক্ষণ দেখা দেয়, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। এই চরম বিপর্যয়কে লাংস অ্যাটাক’‌ বলে। চিকিৎসা না করা হলে সিওপিডির এই ভয়ঙ্কর পর্যায়ের পরিণতি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

ডাক্তার রাজা ধর, MBBS, MD (TB Respiratory Dis) of Fortis Hospital Anandapur জানিয়েছেন, ‘‌সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি রোগীই বিশ্বের দরবারে ভারতকে সিওপিডি রাজধানী করে তুলেছে।’‌ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘‌ধূমপান, শিল্পাঞ্চলের দূষিত ধোঁয়া, দীর্ঘদিন ধরে কয়লা বা কাঠের উনুনের ব্যবহার সিওপিডির জন্ম দিতে পারে। যা এখন লাং অ্যাটাক বলেই জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে।’‌

ডাক্তার পার্থ সারথী ভট্টাচার্য, MBBS, MD pulmonologist, Institute of Pulmocare Research –কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে, তা হল, ভারতে সিওপিডি অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে খুবই কম জানে। তিনি বলেন, ‘‌আমার কাছে যখন রোগী আসে, দেখি, অনেক আগেই তাদের লাং অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে, জখম হয়ে গিয়েছে ফুসফুস।

গোড়াতেই ধরা পড়ে গেলে, শুধু সুচিকিৎসা করা যায় তাই নয়, রোগীর জীবনের মানও বাড়ানো যায়।’‌ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘সাধারণ মানুষকে ‌ফুসফুসের পরীক্ষার পাশাপাশি, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার পরিমাণ মাপার ব্যাপারটাও মাথায় ঢুকিয়ে ফেলতে হবে। আমাদের মতো বিকাশশীল দেশে দূষণের মাত্রা খুব বেশি, তার সংস্পর্শে এলে বিপদের সম্ভাবনা বাড়ে, তা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে লাং অ্যাটাকের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’‌

ফুসফুসের ক্ষমতা ও কাজ— এই দুটোই সিওপিডির আওতায় পড়ে। লাং ফাংশান টেস্ট করে এই রোগ ধরা হয়। সাধারণভাবে করা হয় স্পাইরোমেট্রি। কেউ একজন কত তাড়াতাড়ি এবং কতটা হাওয়া তার ফুসফুস থেকে বের করে দিতে পারছে, সেটা যে যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়, তাকেই বলে স্পাইরোমিটার। অনেক চিকিৎসকেরই বিশ্বাস, সিওপিডি নির্ণয়ে স্পাইরোমেট্রি সবচেয়ে সেরা উপায় হলেও, অনেকে এটি নিয়মিত ব্যবহার করেন না। মূলত রোগনির্ণয় করা হয় ডাক্তারের চিকিৎসা দক্ষতার সাহায্যে।

‘‌তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের মধ্যেই সব আশা রয়েছে, এমন নয়। ঘনঘন লাং অ্যাটাক ঠেকানো যেতে পারে ইনহেলারের নিয়মিত ব্যবহারেও। প্রতিদিনই সিওপিডি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সেকথা মাথায় রেখেই ইনহেলার ও ফুসফুসে তার ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিরও বিকাশ ঘটেছে সময়ের সঙ্গে। স্পেশার–‌সহ ইনহেলার এবং সদ্য আসা ব্রিদ অ্যাকচুয়েটেড ইনহেলার খুব সহজেই নির্দিষ্ট মাত্রার ওষুধ ফুসফুসে পৌঁছে দিতে পারে, যা শ্বাসনালীকে প্রশস্ত করে ও প্রদাহ কমিয়ে দেয়।’‌ জানিয়েছেন পার্থ সারথী ভট্টাচার্য, MBBS, MD pulmonologist, Institute of Pulmocare Research তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘‌তবে হ্যাঁ, কারো মারাত্মক রকম সমস্যা হলে, তাঁকে অবশ্যই হাসপাতালে পাঠাতে হবে। তবে সাম্প্রতিক যে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এসেছে, তাতে রোগের প্রকোপ কমাতে অনেক কিছু করা যায়।’‌

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয়, ঠিক চিকিৎসা, চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া এবং নিয়মিত অবস্থার

মূল্যায়ন— লাং অ্যাটাক ঠেকাতে এর কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র:‌ ১.‌ গ্লোবাল বার্ডেন অভ ডিজিজ স্টাডি ১৯৯০–‌২০১৬

No comments:

Post a Comment