গান্ধীজির স্বনির্ভরতার আদর্শে দীক্ষিত সমাজকর্মী, পরিবেশবিদ তথা কত্থক নৃত্যশিল্পী আরুষি নিশঙ্কের উদ্যোগ ও অনুপ্রেরণায় উত্তরাখন্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলারা ‘সুই ধাগা’ প্রকল্পে নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁদের তৈরী অসংখ্য খাদির সুতির মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশকর্মী, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সচেতনতা প্রচারক কর্মচারী ও কোভিড নিয়ন্ত্রণে প্রথম সারিতে থাকা যোদ্ধাদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই দিল্লী, মুম্বই ও উত্তরাখন্ডের বড় ও ছোট শহরগুলিতে এই গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরী প্রায় এক লক্ষের বেশী মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে।
খাদি একদিকে যেমন গান্ধীজির স্বনির্ভরতার ঐতিহ্যবাহী প্রতীক তেমনই পরিবেশবান্ধব এই প্রচেষ্টার প্রতিটি বুননে নিহিত আছে প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারত গঠনের স্পষ্ট ইঙ্গিত। যে সহস্রাধিক মহিলা এই ‘সুই ধাগা’ প্রকল্পে সামিল তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। কলকাতার এহসাস উইমেন এর অন্যতম সদস্য নীলিশা আগরওয়াল এর সঙ্গে এক মুলাকাত শীর্ষক ওয়েবিনারে এমনটা জানান অতিথি আরুষি। কলকাতার সুপ্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই ওয়েবিনারটি আয়োজিত হয়েছিল। বিশিষ্ট ও খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাক্তিবর্গের সাথে প্রাণখোলা সাক্ষাতকারের আসর এক মুলাকাত যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
“তারুণ্য ও সাফল্যের নিদর্শন আরুষির জীবনদর্শন, মতবাদ ও স্বপ্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে। ভারতীয় ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মহিলাদের অনুপ্রাণিত করার কাজে ব্রতী হয় আরুষি। বর্তমানে ‘স্পর্শ গঙ্গা’ ক্যাম্পেনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে গঙ্গা নদী ও তার জীববৈচিত্র রক্ষায় সামিল করেছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা” জানালেন প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি শ্রী সন্দীপ ভূতোড়িয়া।
দেরাদুনের হিমালয়া আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারপার্সনের পদে রয়েছেন আরুষি। একইসঙ্গে তিনি ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট সামিট (আই.ই.এস) এও অংশগ্রহণ করেন ও ‘স্পর্শ গঙ্গা ফাউন্ডেশন’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিবিধ কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, পরিবেশ সচেতনতা, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন, নারীকল্যান, জল সংরক্ষণ, গঙ্গাদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য নদনদী পরিচ্ছন্ন রাখা। ‘স্পর্শ গঙ্গা’র কর্মীদের ভারত সরকার ‘গঙ্গা হিরো’ র আখ্যা দিয়েছে।
২০০৯ সালে আরুষি ‘বিউটিফুল ভ্যালি’ নামক পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রকল্পের সূচনা করেন। এই প্রকল্পে তিনি দলাই লামা এবং অভিনেত্রী সাংসদ হেমা মালিনীর সমর্থন ও পান। আরুষির
জনকল্যানমূলক কর্মসূচীর প্রধান অনুপ্রেরণা হলেন তাঁর বাবা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল।
আরুষির উদ্যোগে সামিল ৮০০ জন মহিলা মাস্ক ও বাসি ফুল থেকে ধূপকাঠি, পরিবেশ-বান্ধব চটের ব্যাগ তৈরীর প্রশিক্ষণ লাভ করে স্বনির্ভর হতে পেরেছে। বিশিষ্ট কত্থক শিল্পী হিসাবেও আরুষি ১৫ টিরও বেশী দেশে নৃত্য পরিবেশন করেছে। তাঁর কত্থক ব্যালে ‘গঙ্গা অবতরণ’ এর পরিবেশনা দেশে বিদেশে বিপুলভাবে সমাদৃত হয়েছে। আরুষি জানান নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি তাঁর দুটি স্বপ্ন পরিবেশ সুরক্ষা ও নৃত্য কে একত্রিত করতে পেরেছেন।
এই তরুণী উদ্যোক্তার সৃষ্টিশীল কাজের পরিধি যথেষ্ট প্রশস্ত। ইতিমধ্যেই তিনি দুটি বই লিখেছেন এবং ‘মেজর নিরালা’ নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর নির্মিত একটি আঞ্চলিক সিনেমার প্রযোজনাও করেছেন। প্রশ্নকর্তা নীলিশা আগরওয়ালের প্রশ্নে আরুষি জানান তিনিন বিগ ব্যানার বলিউড প্রজেক্টেও আগ্রহী। তিনি আরও জানান ওয়েব সিরিজের বিষয়ে কয়েকজন পরিচালক ও প্রযোজকের সঙ্গে তাঁর কথাও হয়েছে। প্রসূন যোশী এই বিষয়ে আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।
কোভিড-১৯ মাহামারীর ফলে পরিবর্তিত গৃহবন্দী জীবনেও পরিবেশ সুরক্ষায় সামিল হতে পারি আমরা। সন্ধান দিলেন আরুষি। সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রাখা এবং জল অপচয় রোধ করার মাধ্যমে আমরা পরিবেশ সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব পালন করতে পারি। ভারতের ২২টি দেশে অদূর ভবিষ্যতে জলসংকট দেখা দিতে পারে। ব্যবহৃত জলের মধ্যে ৭০ শতাংশ অপচয় হয়। এই জল অপচয় আমরাই রোধ করতে পারি।
No comments:
Post a Comment