কলকাতা যেন 'মিনি অসম' - Songoti

কলকাতা যেন 'মিনি অসম'

Share This
তাঁদের প্রত্যেকেরই আসল ঠিকানা অসম। তবে কর্মসূত্রে  বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। পরিবার-পরিজন নিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছেন । অসমের প্রতি টান থাকলেও কলকাতা এখন তাঁদের কাছে বেঁচে থাকার রসদ। বিহু অসমের জাতীয় উৎসব। আর সেই উৎসবে সামিল  হল অসমবাসীরা। বিহুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এই উৎসব পালিত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে । বিহু মূলত কৃষি ভিত্তিক উৎসব। তিন প্রকার বিহু উৎসব পালিত হয়-- ব’হাগ বিহু বা রঙ্গালী বিহু, কাতি বিহু বা কঙ্গালী বিহু এবং মাঘ বিহু বা ভোগালী বিহু।
কলকাতায় উদযাপিত হল ভোগালী বিহু উৎসব। কলকাতার অসম ভবনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জমজমাট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অসম সোসিও লিটারেলি ক্লাবের উদ্যোগে অসমের জাতীয় উৎসবে সামিল হন বহু নাগরিক । ক্লাবের সম্পাদক চন্দন  ফুকম  বলেন, 'আমাদের জাতীয় উৎসবের দিন আমরা কলকাতায় যেভাবে আনন্দে মাতলাম তাতে মনেই  হল না আমরা অসমের বাইরে আছি।'
১৯৭২ সাল থেকে  কলকাতায় এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। যাঁদের মন পড়ে থাকে অসমে , তাঁরা বছরের এই একটি দিনের জন্য বছরভর অপেক্ষা করে থাকেন।  অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া একজন শিক্ষিকা রেখা ভট্টাচার্যের কথায়, ' গত সাত বছর কলকাতায় আছি। এই দিনটি আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা দিন।'  তিন দশকেরও বেশি  সময় ধরে কলকাতায় কর্মসূত্রে রয়েছেন করুণাকান্ত ডেকা। তিনি বললেন, ' বছরের এই একটি দিনে আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন, ঠিক অনুষ্ঠানে ছুটে আসি। বিহু উৎসব আমাদের কাছে মিলন উৎসব।'
'বিহু' শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে নানা মতবাদ আছে, কিন্তু কোনও মতই সর্বসম্মত নয়। কোনও কোনও পণ্ডিতের মতে সংস্কৃত 'বিষুবত' শব্দ থেকে বিহু শব্দের উদ্ভব হয়েছে। বৈদিক 'বিষুবন' শব্দের অর্থ বছরের যে সময়ে দিন এবং রাত সমান হয়। অনেকের মতে, বিহু শব্দটি বৈ (উপাসনা) এবং হু (গরু) এই শব্দ দুটির সমন্নয়ে সৃষ্ট।  বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার মতে বিহু শব্দটি কৃষিজীবী ডিমাসা জনজাতির মধ্যে প্রচলিত শব্দ। তাঁরা তাঁদের দেবতা ব্রাই শিবরাইকে শস্য উৎসর্গ করে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রার্থনা করেন। 'বি' শব্দটির অর্থ প্রার্থনা করা এবং 'শু' শব্দের অর্থ শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিশু শব্দ থেকে বিহু শব্দের উৎপত্তি। অন্যমতে 'হু' শব্দটির অর্থ দান করা।
'বন্ধু' কলকাতাকে সঙ্গে নিয়ে অসমের জাতীয় উৎসব পালন, কলকাতা যেন 'মিনি অসম'
তবে যে যাই বলুন না কেন, উৎসবের স্বর্ণালী সন্ধ্যায় এদিন কলকাতায় অসমিয়া সংস্কৃতি মেনে নাচ গান বাজনা কবিতায় একপ্রকার হুল্লোড়ে মাতলেন সব্বাই। চলল দেদার খাওয়া-দাওয়াও। আয়োজনে ছিল পিঠেও । মাঘ মাসে ভোগালী বিহু বা মাঘ বিহু পালন করা হয়। ভোগালী শব্দটি ভোগ বা খাদ্য থেকে এসেছে। অসমে এই বিহু উৎসব তিন দিন ধরে পালন করা হয়। পৌষ সংক্রান্তির দিনে বিকেলবেলায় যা উরুকা নামেও পরিচিত, যুবকেরা নদীর তীরে মাঠে উৎপাদিত শস্যের খড় দিয়ে ভেলাঘর নামক কুটির নির্মাণ করেন এবং তা দিয়ে রাত্রে মেজি নামক আগুন জ্বালিয়ে উৎসব পালন করেন। রাত্রিবেলায় তাঁরা মেজির চারপাশে জড়ো হয়ে বিহুগীতের গান করেন, ঢোল আদি বাদ্যযন্ত্র বাজান এবং সমবেত ভাবে খাবার খান।
কলকাতাতেও সেই আয়োজনের বন্দোবস্ত ছিল। উৎসবের সময় অসমে উৎসবের দ্বিতীয় দিন।  সকালে স্নান করে মূল মাজিতে আগুন জ্বালান এবং  এই আগুনে পিঠে ও সুপুরি ছুঁড়ে দেন। এরপর তাঁরা অগ্নির নিকট প্রার্থনা করেন। এরপর এলাকার ফলগাছগুলিতে শস্য বেঁধে দেওয়া হয়। এদিন সারাদিন ধরে মোষের লড়াই, মোরগের লড়াই প্রভৃতি ক্রীড়া চলতে থাকে। তবে এতসবের আয়োজন কলকাতায় না থাকলেও এক অনাবিল আনন্দে  সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নিলেন আট থেকে আশি। ' বন্ধু' কলকাতার সঙ্গে জাতীয় উৎসব পালন করল অসম। কিছুক্ষণের জন্য কলকাতা যেন হয়ে উঠল ' মিনি অসম '।

সৌজন্য ঃ নিউজ ১৮ বাংলা

No comments:

Post a Comment