অব্যক্ত নিষেধ ! || সুভাষ কর || সাহিত্যগ্রাফি - Songoti

অব্যক্ত নিষেধ ! || সুভাষ কর || সাহিত্যগ্রাফি

Share This


গতবছর প্রয়াত 'মালকিন-দিদি'র ছোটমেয়ে তৃষার আজ বিয়ে। মায়ের অভাব কিছুটা ভুলতে তৃষা নিজেই বিয়েতে 'মালতীমাসী'কে ওদের কলকাতার বাড়ীতে নিয়ে এসেছে। টানা চল্লিশবছর মালকিন-দিদির সব ভাইবোনদের ছেলেমেয়েরাই এই 'মালতীমাসী' বা 'মালতীপিসী-র হাতে বড় হয়েছে। আজ তারা সব্বাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মালতী কিন্তু এতদিন তার দেশের বাড়ীতে কোমর ভেঙে বিছানায় পড়েছিল! মাসী-পিসী ডাকা এই তৃষা ও তার 'তুতো' ভাইবোনেরাই চাঁদা তুলে মালতীর চিকিৎসা করিয়েছে; এখন সবাই নিয়মিত তাকে মাসোহারাও দিচ্ছে। তাইতো পা টেনে চলা পড়ন্ত জীবনটা এখনো কোনভাবে চলে যাচ্ছে মালতীর।

বিয়ের শেষে  বিয়ের আসরেই তৃষা বরসহ যুগলে এসে অন্য গুরুজনদের মতো মালতীমাসীকেও প্রণাম করল। সুন্দর দৃষ্টান্তমূলক মানবিকতা! তবুও আজ বাড়ীভর্তি কুটুমমহলে বাচ্চাদেরকে নাম ধরে 'তুই' বলার সেদিনের সেই পুরনো অভ্যেসটায় অতিকষ্টে নিজেই লাগাম ধরল মালতী। ফলে, আশীর্বাদ করে যা হ'তে পারত 'খুব ভাল থাকিস', তা হয়ে গেল 'খুব ভাল থেকো' ইত্যাদি। হাজার হোক, আজ যে তৃষারা মাসী বা পিসীর উপর নির্ভর করা সেই ছোটটি নেই! বিবিধ রক্তের সম্পর্কগুলিই আজ যেখানে 'স্ট্যাটাস' দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান, সেখানে আত্মীয়তাহীন এই 'মালিক-কাজের মাসী'-র পাতানো অসম সম্পর্কগুলির স্থায়িত্ব আর কতদিনই বা হতে পারে?

কিন্তু যেটা লক্ষণীয় ছিল তা হ'ল- আজ হঠাৎ মালতীমাসীর তরফে সম্পূর্ণ অচেনা এক নতুন সম্বোধনে তৃষার দিক থেকেও তেমন কোন ভাবান্তর দেখা গেল না। তবে কি সমাজের কোন অব্যক্ত নিষেধে তেমনটি ঘটাই স্বাভাবিক ছিল?

No comments:

Post a Comment