কালি পুজোর আগের রাত || শম্পা বিশ্বাস || সাহিত্যগ্রাফি - Songoti

কালি পুজোর আগের রাত || শম্পা বিশ্বাস || সাহিত্যগ্রাফি

Share This

 যথারীতি অন্যান্য দিনের মতো কাল রাতেও আমি সাড়ে বারোটার সময় ছাদে গিয়েছি। এটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস,সাড়ে বারোটা থেকে দেড় টা পর্যন্ত আমি ছাদে থাকি।আকাশ, তারা , চাঁদ দেখি, তাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তে চেয়ে থাকি,বিভোর হয়ে যাই, মাথায় অনেক কিছু লেখার রসদ জমা হয়।
                 কালও আমি ছাদের একটা বাঁধানো বেদীর উপর বসে আছি।বিভোর হয়ে অমাবস্যার আকাশ দেখছি।হটাৎ পিছন দিক দিয়ে কে যেন জড়িয়ে ধরলো।আমি শিউরে উঠলাম, সেই চেনা স্পর্শ, সেই চেনা অনুভূতি, সেই চেনা গন্ধ।আমি ভালো লাগায় বুঁদ হয়ে বললাম," এই কি গো,ছাড়ো " কতক্ষন এই ভাবে ছিলাম জানি না।কিছুক্ষন পর ও আমায় আলিঙ্গন মুক্ত করল, আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই, আমি অবাক। ছাদের এদিক ওদিক দেখলাম কেউ নেই। হটাৎ আমার গা টা ছম্ ছম করে উঠলো। ভাবলাম আমার বর হতে পারে কারণ ওর একটু স্বভাব আছে আমাকে আচমকা ভয় দেখানো। আমি এক দৌড়ে নীচে গেলাম। শুনছো, শুনছো বলে চিৎকার করে ঘরে ঢুকে দেখি আমার বর তখন বেশ গভীর ঘুমে ডুবে আছে। বুঝলাম এটা ওর কান্ড নয়। আমি কেমন দিশেহারা হয়ে পড়লাম। হটাৎ চোখটা আটকিয়ে গেলো শোকেসের উপর রাখা টেবিল ক্যালেন্ডারের উপর ...২৬ সে অক্টোবর, আমি অস্থির হয়ে উঠলাম। আমি দৌড়ে তিনতলায় আমার একান্ত নিজের এক চিলতে ঘরে গেলাম। আমি কি করে ভুললাম এই দিনটার কথা??? কি করে ভুললাম?? আমার অন্তরের এক লুকানো কোণ থেকে জমানো কান্না উথলে উঠলো। আমি দৌড়ে গিয়ে পুরানো বাক্স টা খুললাম। তার সাদা কালো, আবছা হয়ে যাওয়া ছবিটা বার করে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললাম।
                    এইদিনে তুমি চলে গিয়েছিল ভয়ঙ্কর বাইক আসিসিডেন্টে, আমি বরাত জোরে বেঁচে গিয়েছিলাম, যমে মানুষে টানাটানির পর হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলাম। এত বছর আমি তোমার কথা ভুলিনি।যত্ন করে আমার বুকের ভিতর তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আজ যখন ভুলে গেলাম, তুমি তোমার স্পর্শ দিয়ে আমাকে মনে করিয়ে দিয়ে গেলে।
              তবে কি সময় সব কিছু ভুলিয়ে দেয়????

No comments:

Post a Comment