প্রথমবার কলকাতা শহরে প্রদর্শিত হলো রাজদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যচিত্র 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস' - Songoti

প্রথমবার কলকাতা শহরে প্রদর্শিত হলো রাজদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যচিত্র 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস'

Share This

কলকাতাঃ কলকাতায় যাদবপুর ইউনিভার্সিটির রণজয় কার্লেকার মেমোরিয়াল হলে প্রথমবার প্রদর্শিত হল রাজদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি 'লস্ট ফর ওয়ার্ডস'। উপস্থিত ছিলেন লিঙ্গুইস্টিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার জয়েন্ট সেক্রেটারি কাকলি মুখার্জী, ল্যাঙ্গুয়েজ ডিভিশনের রিসার্চ অফিসার শিবাসীস মুখার্জী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্গুইস্টিক ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক অভিজিৎ মল্লিক সহ আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। 

এই "লস্ট ফর ওয়ার্ডস" ছবিতে বিলুপ্তপ্রায় টোটো ভাষা ও এই ভাষাভাষী মানুষদের জীবনযাপন তুলে ধরেছেন রাজাদিত্য।। স্বাধীনতার পর ভারতবর্ষে দেড়শ ভাষা মারা গেছে। প্রতি চার মাসে একটি করে ভাষা মরে যায়। তার মধ্যে ৩০টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থার মধ্যে আছে। যেগুলো যেকোনো দিন হারিয়ে যেতে পারে। ভারত-ভুটান সীমান্তের শেষ গ্রামে টোটো পাড়ায় একটি ভাষা যাতে ১,৫৮৫ জন বলে, (তাও ৩০০-৪০০ জন বাইরে চলে গেছে।) মোট ১০০০ থেকে ১৩০০ জন এই ভাষায় কথা বলছে বর্তমানে। ইউনেস্কো এই ভাষাকে ক্রিটিকালি এনডেঞ্জার্ড হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 


কেন টোটো ভাষা অবলুপ্তি পাচ্ছে ধীরে ধীরে, কেনই বা ভাষা রক্ষার লড়াই করে যেতে হচ্ছে এই জনজাতিকে, তিনজন ভাষা যোদ্ধা কীভাবে যুদ্ধ করে এই ভাষাকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে লড়াই করে চলেছেন প্রতিনিয়ন, সেটাই মূলত দেখানো হয়েছে এই সিনেমাটি’তে। 

ধনীরাম টোটোই প্রথম টোটো ভাষায় উপন্যাস লেখেন। টোটো ভাষায় আগে কোনো বর্ণমালা ছিল না। ধনীরাম টোটো প্রথম ২০১৪ সালে টোটো ভাষার বর্ণমালা আবিষ্কার করেন।  ধনীরাম টোটো ভাষাতত্ত্ব, ফোনেটিক, লিপির বিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা বই সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন। সেই লিপির স্বীকৃতির জন্য ভাষা দিবসের প্রাক্কালে ভাষা রক্ষার শপথ নিয়েছেন তিনি। ধনীরামের বক্তব্য, ‘একটা জাতি যে ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষায় কোনও লিপি নেই। যারা এই পরিস্থিতির মুখে আছেন একমাত্র তারাই এই অসুবিধের কথা বুঝতে পারবেন। কী করে টিকবে সেই জাতি?’ ধনীরামের বক্তব্য, ‘বুদ্ধিজীবীরা কী জানেন না, ইংরেজি ভাষা শিখেও ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না। টোটো ভাষা চাকরি আনতে পারবে কি না জানি না। কিন্তু এতো আমাদের জাতিসত্ত্বার প্রশ্ন। একটা ভাষাকে বাঁচানোর প্রক্রিয়া।’

অন্যদিকে পরিচালক রাজাদিত্য ব্যানার্জী বলেন, "এই ছবিটি বেশ ইউনিক এই কারণে ‘ভাষা আমাদের বৈচিত্রের এক প্রতিচ্ছবি। আমাদের জীবনের এক একটা প্রতিবিম্ব। আমাদের সেই বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের দাপটে ছোট্ট গ্রামের কিছু মানুষেরা, যারা তিব্বত থেকে এসেছিল। তারা টোটো ভাষা রক্ষা করে চলেছে প্রাণপণে। তার মধ্যে অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজের খোঁজে বেরিয়ে পড়তে। শুধু বৃদ্ধরাই এই ভাষায় কথা বলছে। নতুন প্রজন্ম পড়াশুনোর জন্যে, কাজের জন্যে অন্য ভাষা শিখতে বাধ্য হচ্ছে। ভাষাটার অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। বহুবছর ধরে গবেষণা করার পর সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। ধনীরাম টোটো, সত্যজিৎ টোটো ও বিপ্লব নায়ক এই তিনজনের আপ্রাণ প্রচেষ্টা ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখা। সিনেমাটির মূল উদ্দেশ্যই এই বিপণ্ণ ভাষার লড়াইকে জনসমক্ষে নিয়ে আসা।" 

৯০ মিনিটের এই তথ্য চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন তন্ময় কর্মকার, অতিরিক্ত সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে রয়েছেন গীরিধারী গড়াই ও শুভজিৎ রায়, শব্দ গ্রহণ ও সুরারোপে রয়েছে ব্যাকবেঞ্চার্স ও ছবির সম্পাদনা করেছেন সুমন্ত সরকার।।

No comments:

Post a Comment