সরকারী সহযোগীতা না থাকলেও করোনা-কালে সংক্রমণ ঠেকাতে বিকল্প পরিবহণ মাধ্যম হয়ে উঠছে সাইকেল : রঘু জানা - Songoti

সরকারী সহযোগীতা না থাকলেও করোনা-কালে সংক্রমণ ঠেকাতে বিকল্প পরিবহণ মাধ্যম হয়ে উঠছে সাইকেল : রঘু জানা

Share This

শুভজিৎ দত্তগুপ্ত ,কলকাতা : ক্রমশই শিথিল হচ্ছে  লকডাউন  কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অন্তরায় হয়ে উঠছে যানবাহন পরিষেবা  ধীরে ধীরে পরিবহণ চালু করার জন্য সম্মতি দেওয়া হলেও বিশেষ কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। বাসে ২০ জনের বেশি যাত্রী উঠতে পারবেন না, যতগুলি সিট ততজন যাত্রী নিতে হবে, সব রুটে বাস চলবে না। সরকারের তরফে এই ধরনের শর্তগুলি তো আছেই। তার ওপর এতদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগের তুলনায় অনেক বেশি ভাড়া চাইছে বাস, ট্যাক্সি থেকে অটোওয়ালারাও। এসব ঝামেলা থেকেবাঁচতে সাইকেল ক্রমেই তার জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে চলছে মন্তব্য করেন কলকতার সাইকেল আন্দোলনের প্রাণপুরুষ তথা কলকাতা সাইকেল সমাজের আহ্বায়ক  রঘুজানা। ২০০৮ সালে কলকাতা কে গতিময় করে তোলার অজুহাতে চালু হওয়া সাইকেল চালানোর নিষেধাজ্ঞা কে কেন্দ্রকরে চলা ব্যাপক পুলিশী  ধরপাকড় এর মাধ্যমে সাইকেল আটক ও জরিমানার ফলশ্রুতি তে কলকাতার বুকে ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল সাইকেল ,এর প্রতিবাদে সাইকেল আরোহীদের অধিকার নিয়ে সাইকেল প্রেমীদের সংগঠন কলকতার সাইকেল সমাজ কাজ করেচলছে বিগত দশবছর ধরে। এই পরিস্থিতিতে করোনা কালীন লকডাউন হটাৎ ই সাইকেল কে ফিরিয়ে এনেছে কলকতার রাজপথে। রঘু জানার মতে ,"প্রতিটি সংকটেই তৈরি হয় কিছু কিছু সমস্যার নতুন সমাধান সূত্র। অতিমারীর সংকটে অভিজ্ঞ মানুষজন দৈহিক দূরত্বের সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে রেহাই পেতে  বাই সাইকেলের ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়াবে বলেই আশা করা যায়। যদিও  লকডাউন সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হওয়ার পর যখন যানবাহন স্বাভাবিকচলাচল করবে তখন সাইকেল এর প্রতি প্রশাসনের ভূমিকা ও এখন যারা সাইকেল ব্যবহার করছে তখন সাইকেল চালানোর বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ প্রকৃত পরিস্থিতি বর্ণণা করবে "।
কলকাতা সাইকেল সমাজের দাবী তুলে ধরে রঘু জানা বলেন   ‘পাবলিক ভেহিকেলর জন্য ১/৩ভাগ, সাইকেলের জন্য ১/৩ ভাগ বাকি ১/৩ ভাগ অন্যান্য যানবাহনের জন্য রাখলে কলকাতার রাস্তা ট্রাফিকের তুলনায় বেশি চওড়া মনে হবে।২০০৮ সালে সাইকেলের গতির জন্য কলকাতার ৩৮ রাস্তায় সাইকেলকে নিষিদ্ধ হয়  পরে ২০১৪ সালে আরও ২৪ রাস্তা নিষিদ্ধ হয়,মাঝে কিছু রাস্তায় সাইকেল চলাচল করলেও সব রাস্তা গুলি কেই সাইকেল এর জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বস্তুত কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থায় সাইকেলকে এতদিন কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয় নি। শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে সাইকেল তো নিষিদ্ধই, এখনও। অন্তত প্রশাসন তো এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে এখনও কিছু জানান নি। এমনকী বিভিন্ন জায়গায় সাইকেল চালালে ট্রাফিক পুলিশকে জরিমানা দিতে হয়। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষেরা, যাঁরা জীবিকার প্রয়োজনে, খরচ বাঁচাতে সাইকেলের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, তাঁরাই বেশি হেনস্থা হন পুলিশের কাছে।" যদিও এই করোনা-কালে কিছু  সরকারি উদ্যোগে সাইকেল প্রেমী দের উৎসাহিত করেছে ,নিউটাউনে  সাইকেল লেন নিয়ে কাজ শুরু করবার উদ্যোগ নিয়েছেন সরকার,কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হয়েছে নিষেধাজ্ঞা ,দক্ষিণ কোলকাতার কয়েকটি থানা এলাকা বাদে সাইকেল আরোহীদের পুলিশের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না, সরকারি উদ্যোগে সাইকেল প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে নিউ টাউনে। যদিও সাম্প্রতিক তম প্রেস কনফারেন্স এ  মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সাইকেলের জন্য বিকল্প রাস্তা নির্দিষ্ট করার দায়িত্ব  কলকাতা পুলিশ কমিশনারের উপর দেওয়াতে ক্ষুব্ধ সাইকেল প্রেমী মানুষেরা । তাদের মতে ,শহরের সাইকেল লেন বা পরিকাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা নগর উন্নয়নের দক্ষ ও পেশাদারী লোকজনের কাজকর্ম। সেরকম কোনও ঘোষণা না থাকাতে আনন্দে নেচে ওঠেনি মন। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় লোকজনের খুশির প্রকাশ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু কলকাতা পুলিশ কমিশনারের সাইকেল সংক্রান্ত নোটিশে ছুঁচোবাজির খেল দেখা গেল। ওনার লিখিত বক্তব্যে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে শহরের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো সাইকেল নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে কিন্তু পুলিশ সাইকেল চালকদের এখনই কোনো হয়রানি বা জরিমানা করবে না। তাই সাইকেলের জন্য কিঞ্চিৎ ব্যবস্থাটা সাময়িক। ভবিষ্যতে আবার সাইকেল ফাইন ফিরে আসবে।

 সাইকেল আন্দোলনের পুরোধা রঘু  জানার মতে ,"গত ২ জুন কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ministry of housing and urban affairs’ থেকে দেশের প্রত্যেক রাজ্য সরকারের কাছে যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে তাতে সাইকেলকে খুব গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও  রাজ্য সরকারের তরফ থেকে  সাইকেল নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিশা নির্দেশ পাওয়া গেলো না এখনো।  সরকারের পরিবহন নীতি পুলিশ তৈরি করে না, ওটা মন্ত্রীসভার কাজ। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া পুলিশকে সিদ্ধান্ত নিতে বললে তাদের চিন্তা ও পরিকল্পনায় সবচেয়ে সহজ শিকার হয়ে উঠবে সাইকেল কারণ পুলিশের মূল লক্ষ্য থাকে দূর্ঘটনা কমানোর চেষ্টাকরা এবং তারা সেই কারণেই সাইকেল কে সরাতে চায় রাজপথ থেকে ,যদিও মোটর সাইকেল বেশি দূর্ঘটনা ঘটে অথচ মোটর সাইকেল নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রিত হয় না।"তবুও  এই কঠিন সময়ে অনন্যোপায় হয়ে সাইকেল বেছে নেওয়া   মানুষদের দেখে আশাবাদী রঘুজানার মতো সাইকেল প্রেমী মানুষেরা। বিশেষ করে মেয়েদের সাইকেল ব্যবহার চোখে পড়ছে বেশি বেশি করে। সাইকেল ব্যবহারে অভ্যস্ত মানুষকে পুনরায় হয়রানি জরিমানা জুলুমের চেষ্টা করলে সামাজিক অশান্তির আশংকা থাকবে তাই হয়তো রাজনীতিতে এর প্রভাবের কথা ভেবেই রাজনীতির লোকেরা সংবেদনশীল হয়ে চিন্তা করবে সাইকেল এর বিষয়ে। আপাততঃ আশা -আশংকার দোলাচলেই রয়েছেন রঘুজানা ও কলকাতা সাইকেল সমাজের সঙ্গে যুক্ত সাইকেল প্রেমী মানুষেরা।

No comments:

Post a Comment