পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবয়স্ক একজন লোক লকডাউনের মধ্যেই বিরল এক অস্থি টিউমার সার্জারির জন্য মানিপাল হাসপাতাল হোয়াইটফিল্ড, বেঙ্গালুরুতে আসেন - Songoti

পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবয়স্ক একজন লোক লকডাউনের মধ্যেই বিরল এক অস্থি টিউমার সার্জারির জন্য মানিপাল হাসপাতাল হোয়াইটফিল্ড, বেঙ্গালুরুতে আসেন

Share This

 কলকাতাঃ বাংলায় প্রবাদ আছে, "সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়," দক্ষ চিকিৎসকের দ্বারা সময়মত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে টিউমার সহ অনেক শারীরিক অসুস্থতার ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

লকডাউনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা 42 বছর বয়সী একজন রোগী চোয়ালে প্রচন্ড ব্যথা এবং ফোলা নিয়ে ওয়াইটফিল্ডের মানিপাল হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন। তার সমস্যাটি ছিল যে, তার চোয়ালজুড়ে বিস্তৃত বিশাল টিউমারটির জন্য চাবানো, গিলে খাওয়া বা কথা বলায় কষ্ট হয়। সিটি স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা যায় একটি বড়সড় কয়েকটি স্থান জুড়ে বিস্তৃত ক্ষতের ফলে চোয়ালের 3টি জায়গায় হাড়ের ক্ষয় হয়ে গেছে। বায়োপসি থেকে জানা যায় এটি অ্যামেলোব্লাস্টোমা নামক বিরল একটি ক্যান্সার যা স্থানীয়ভাবে ক্ষতিসাধন করে এবং পুনরায় হবার ঝুঁকি থাকে।


এই ধরনের টিউমারের চিকিৎসার প্রথম ধাপই হল সার্জারি এবং ঠিকভাবে পুরো টিউমারটি অপসারণ করতে না পারলে পুনরায় আবার টিউমার দেখা দেয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে। এই ক্ষেত্রেও নিজ এলাকায় রোগীর পূর্বে আরও দুইবার এই টিউমার নিরসনের অপারেশন হয়েছিল এবং যথারীতি তা আবার দেখা দিয়েছে। শেষমেশ চোয়ালের অসহ্য যন্ত্রণা এবং এই ভয়ানক অবস্থা সহ্য করতে না পেরে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে তিনি এখন মানিপাল হাসপাতালে এসেছেন।




সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট এবং প্লাস্টিক রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জনদের একটি সম্মিলিত দলের অধীনে তিনি সফলভাবে সঠিক চিকিৎসা পেতে সক্ষম হয়েছেন। মানিপাল হাসপাতালের কনসালটেন্ট - সার্জিকেল অনকোলজিস্ট ডাঃ আশ্বিন রাজাগোপাল বলেন, “চোয়ালের একপাশের পুরো অংশটিই টিউমারের সাথে সংযুক্ত ছিল দেখে এর প্রায় ৯০ ভাগ ফেলে দিতে হয়েছিল। পুরো সার্জারিটি সম্পন্ন করতে ৪ ঘণ্টা সময় লেগেছিল।”


অ্যামেলোব্লাস্টোমা বিনাইন প্রকৃতি, অর্থাৎ ততোটা ক্ষতিকর না হয়ে থাকলেও, চিকিৎসার পর এটি ফিরে আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যদি এটি সম্পূর্ণরূপে অপসারণ না করা হয়ে থাকে তাহলে এটি ক্রমশ বেঁড়েই চলে এবং আক্রান্ত স্থানের হাড়গুলো ব্যাপক হারে ধ্বংস করতে থাকে। সকল টিউমার কোষ সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য একজন প্যাথলজিস্ট সার্জারির সময় প্রায়ই টিস্যুর পরিধি পরীক্ষা করে দেখেন। এই পরীক্ষাটিকে বলা হয় সার্জিকাল মার্জিন। ডাঃ আশ্বিন রাজাগোপাল পাশাপাশি বললেন যে, “কোনো ধরণের নেতিবাচক অনকোলজিকাল মার্জিন ছাড়াই হাড়ের এবং মুখের পেশী তলের সহজাত অপসারণই আরও একটি ঘটনা প্রতিরোধে প্রধান সয়াহক হিসেবে কাজ করেছে। সম্পূর্ণ টিউমারটি অপসারিত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি শতকরা ১০০ ভাগ নিশ্চিত হতে চেয়েছি।”


কিন্তু, শুধুমাত্র সমস্যাটির একাংশ সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। খাবার গিলে খাওয়া এবং কথা বলার সুবিধার্থে রোগীটির একটি গুরুত্বপূর্ণ চোয়াল রেখার পুনর্গঠন (জোলাইন রিকনস্ট্রাকশন) সার্জারিও প্রয়োজন ছিল। 8 ঘণ্টা দীর্ঘ জটিল এই প্লাস্টিক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারিটিতে তার ফিমার বোউন অপসারণ করা হয়, চোয়ালের সাথে মিলানোর জন্য এর পুনরায় আকৃতি প্রদান এবং একই সাথে চোয়াল রেখা ঠিক করা- এই কাজগুলো করা হয়। মানিপাল হাসপাতাল হোয়াইটফিল্ড এর প্লাস্টিক, রিকন্সট্রাক্টিভ এবং কসমেটিক সার্জারির কনসালটেন্ট ডাঃ রামানি সিভি আরও বললেন যে, “পুনরাবৃত্তি ঘটানো অ্যামেলোব্লাস্টোমা সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা এবং পুনর্গঠন করা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয় ছিল, বিশেষ করে টিউমারটির এতোটা বিস্তৃত প্রকৃতির কারণে। চোয়ালের নতুন হাড় গঠন করাও দুরূহ ছিল, কেননা মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য এবং একই সাথে চোয়ালের কার্যকারিতা বজায় রাখাটা জরুরী ছিল যাতে করে তিনি স্বাভাবিকভাবে চাবানো, খাবার গিলে খাওয়া এবং কথা বলার মতন কাজগুলো করতে পারেন।”


সার্জারির পরে রোগীটি সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। মানিপাল হাসপাতাল হোয়াইটফিল্ড এর প্লাস্টিক, রিকন্সট্রাক্টিভ এবং কসমেটিক সার্জারির কনসালটেন্ট ডাঃ সুনীল কুমার বললেন যে, মাস্টিকেশন এবং স্পীচ ফাংশনের জন্য পোস্ট ফিজিক্যাল রেহ্যাবিলিটেটিভ থেরাপির মাধ্যমে রোগীটি এখন স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছেন।


চলমান এই মহামারী চলাকালীন সময়ে গুরুত্বর বা জরুরী কোনো অবস্থায় যথাসময়ে যথাযথ মেডিক্যাল ম্যানেজমেন্ট গ্রহণের উপকারিতার উপর আলোকপাত করে ডাঃ আশ্বিন আরও বললেন যে, “এধরণের সার্জারির জন্য কারো অপেক্ষা করা উচিৎ না। জটিলতা এড়াতে এধরণের রোগীদের তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন।”

No comments:

Post a Comment