আপনার সঙ্গে আলাপ করতে এলাম - হঠাৎ একথা শুনে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে অরিন্দম দেখল তার ফ্ল্যাটের গেটে জিন্স ও টপ পরিহিতা একটি বাইশ তেইশ বছরের সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে. মাত্র একমাস হলো ব্যাংকে P.O র চাকরি পেয়ে সে এখানে এসেছে. এই ফ্ল্যাটের সবার সঙ্গেই এখনো ভাল করে আলাপ হয় নি তার !
কি হলো গেটেই দাঁড় করিয়ে রাখবেন ?
না মানে ..... আপনাকে ঠিক চিনতে .....
আমি পূজা রায়.এই গলির মুখের হলুদ দোতলা বাড়িটা আমাদের. আপনি তো অরিন্দম সান্যাল ? রোজ আমাদের বাড়ির সামনে থেকে আপনাকে ব্যাংকে যেতে দেখি রাতে স্বপনদার দোকান থেকে তড়কা রুটি কিনতেও দেখি তাই আলাপ করার লোভ সামলাতে পারলাম না.
আসুন আসুন ..... আসলে এই মাত্র ব্যাংক থেকে ফিরলাম তো,ঘরদোর ভীষণ অগোছালো.
ব্যাচেলর ছেলেদের ঘর এরকমই থাকে বলে একটা চেয়ার টেনে বসল পূজা. ঘরে আসবাব বলতে একটা টেবিল দুটো চেয়ার আলমারি আর মেঝেতে বিছানা , এটুকুই বাড়ি থেকে এনেছে অরিন্দম. খাটের অর্ডার দিয়েছে. আজই প্রথম মাসের মাইনে তুলেছে. আগামীকাল খাটের ডেলিভারি নেবে.
পূজা জুলজি তে মাষ্টার্স করছে একটা ব্যালে ট্রুপ এ নাচও করে. ওর বাবা জাহাজে চাকরি করেন বেশিরভাগ সময় বাইরেই থাকেন. সারাজীবন বয়েজ স্কুল কলেজে পড়ে মেয়েদের সঙ্গে মিশতে একটু জড়তা হয় অরিন্দমের কিন্তু এই ঘণ্টাখানেক পূজার সঙ্গে কথা বলে তার জড়তা একদম কেটে গেছে মেয়েটিকে বেশ মনে ধরেছে তার!
এতক্ষণ এসেছে ওকে কিছু খাওয়ানো দরকার কিন্তু ঘরে তো কিছু নেই! মা পইপই করে বলে দিয়েছিল সবসময় কটা ডিম,বিস্কুট আর শুকনো মিষ্টি রাখতে এইজন্যই বড়দের কথা শুনতে হয় !
....... কি ভাবছেন ? আমাকে কিছু খাওয়াতে হবে না সামনের রোববার আমার মায়ের সাথে আলাপ করতে আমাদের বাড়ি আসুন সন্ধ্যাবেলায় আর ওইদিন স্বপনদার তড়কা রুটি না খেয়ে আমার মায়ের হাতেই খাবেন.
সে ঠিক আছে যাব কিন্তু আপনি একটু বসুন আমি এক্ষুনি আসছি বলে মানিব্যাগ নিয়ে দৌড়ে দোকানে গেল অরিন্দম .
সিঙ্গারা আর মিষ্টি নিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে এল সে.
কিন্তু একি ! পূজা কোথায় ? আলমারি হাট করে খোলা ! আলমারিতে রাখা মাইনের পুরো টাকা, ল্যাপটপ,ঘড়ি এমনকি পেনটি পর্যন্ত হাওয়া !
টেবিলে একটা চিরকুটে লেখা ....
"মাফ করবেন. এটাই আমার জীবিকা "
সেই রাতে ও পরদিন সে খোঁজ নিয়ে জানল ওই বাড়ি কেন ওই তল্লাটেও পূজা নামে বা ওরকম দেখতে কোন মেয়ে থাকেই না !
No comments:
Post a Comment