গনেশ_ বিশ্বকর্মার আড্ডায় সাক্ষী ছিলাম আমি - Songoti

গনেশ_ বিশ্বকর্মার আড্ডায় সাক্ষী ছিলাম আমি

Share This

সুজিত চ্যাট্টার্জীঃ করোনা আবহে ঘরবন্দী থাকতে থাকতে সবার মতই এই  কলমচিরও প্রাণান্তকর অবস্থা। মুক্তবায়ু সেবনে তাই পায়ে পায়ে পৌঁছে গেছিলাম  কলকাতার গড়ের মাঠে। লোকে বলে, কলকাতার ফুসফুস। তাই নিজের ফুসফুসে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে একটি গাছের নিচে বসলাম। বর্ষাকাল। গুনগুন করে গাইছিলাম, এই মেঘলা দিনে একলা , ঘরে থাকে না যে মন,,,,,,,। হঠাৎ মনে হলো,পাশের ঝোপে কারা যেন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে। হতে পারে কোনো প্রণয়ী যুগল। কিন্তু না । দুটোই পুরুষ কণ্ঠ। অবশ্য আজকাল তৃতীয়পক্ষের প্রেমও স্বীকৃত। কয়েকটি মুহূর্ত। বিক্ষিপ্ত কিছু শব্দ যা কানে এলো,শুনে তো আমার চক্ষু ছানাবড়া। দুজনে স্বর্গের অধিবাসী।একজন শ্রী গণেশ। আর একজন বিশ্বকর্মা। মনে পড়ে গেল , তাইতো। আজ বাদে কাল গণেশ চতুর্থী।আর সেপ্টেম্বর মাসের ১৭তারিখ বিশ্বকর্মা পুজো।তাহলে কি দুজনেই তাই একসাথে চলে এলেন মর্ত্যে? পেশায় সাংবাদিক। কথায় আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। আর এটা তো আমার বাসস্থান মর্ত্য। চুপচাপ তাই মোবাইলে ভিডিও অন করে আলতো করে ঝোপে রেখে দিলাম। দুজনে কথায় এত ব্যস্ত টের পায়নি। চুপচাপ শুনতে শুরু করলাম দুই দেবতার কথোপকথন।

গণেশ: কি ব্যাপার বলতো বিশ্বকর্মা জ্যেঠু,তোমার পুজোর দিনতো দেরি আছে। ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। করোনার বাজারে এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?

মাসখানেকের বেশি কলকাতায় থাকাটা কি নিরাপদ? শুনলাম, করোনাসুর নাকি ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টাচ্ছে।আবার ডেঙ্গুর প্রকোপও নাকি বেড়েছে। অসুর ব্যাটা কখন যে মশাসুর রূপ ধরে কুটুস করে হুল ফোটাবে কেউ জানে না। বেশ ছিলাম বেসরকারি হাসপাতালের চিলেকোঠায়। এই তেপান্তরের মাঠে কেন টেনে আনলে?

বিশ্বকর্মা: দূর পাগল।এটা তেপান্তরের মাঠ নয়।একে বলে গড়ের মাঠ। করোনায় ফুসফুস ঠিক রাখতে শহরের ফুসফুসে নিয়ে এলাম। লকডাউনে লুকিয়ে ঘরে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তোর প্রশ্ন ছিল,এত তাড়াতাড়ি কেন মর্ত্যে এলাম, তাইতো?

ব্যাপারটা কি জানিস,এত আগে আসতে চাইনি।ঠাকুরদাদা ব্রহ্মা ডেকে বললেন,ওরে এবার একটু তাড়াতাড়ি মর্ত্যে যা। আম্ফান ঝড় আসছে সেখানে। বরুণদেব আর বায়ুদেব দুজন মিলে বাংলায় অঘটন ঘটাবে। বলা যায় না , কত সৃষ্টি ধ্বংস হবে। সেগুলো পুনঃনির্মাণ তো তোকেই করতে হবে।তাছাড়া গঙ্গার নিচ দিয়ে মেট্রো রেল চালানোর জন্য সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছে। কে জানে সেখানে যদি কোনো বিপত্তি হয়, তখনতো তোকেই ছুটতে হবে। তারচেয়ে একটু আগেই চলে যা। পিতামহের কথা ফেলি কীকরে?তাই ইচ্ছে না থাকলেও আসতে হল। তা তুই তো দিব্যি আছিস বেসরকারি হাসপাতালে।

গণেশ: তা যা বলেছ। কথায় আছে, কারও সর্বনাশ তো , কারও পৌষ মাস। করোনা আতঙ্ক যেমন বাড়ছে,তেমন অসুস্থ মানুষ সরকারি হাসপাতালে ভরসা না করে বেসরকারি হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে। হাসপাতাল কামাচ্ছে লাখ লাখ টাকা। হঠাৎ দেখি আমাকে এরা এতদিন সস্তার লাড্ডু দিতো। এখন ঘিয়ের লাড্ডু দিতে শুরু করেছে। সাইজটাও বেশ বড়। বুঝলাম, আমদানি ভালো হচ্ছে,তাই ভক্তিও (ঘুষ) বেড়ে গেছে। তাই ওই খাঁটি ঘিয়ের লাড্ডুর লোভে দুদিন আগেই চলে এলাম।

বিশ্বকর্মা: তা বেশ করেছিস। তাছাড়া এবার পাড়ার লালু ভুলুরা গণেশ পুজো করবে বলে মনে হয় না।করলেও নমঃ নমঃ করে পুজো সারবে।

গণেশ: যা বলেছ। আমার পুজোতেই কাটছাঁট।নিজেরা মদ মাংসে তো বাজেট কমাবে না? যাকগিয়ে,এখন বলো তো,এই তেপান,,,, সরি, গড়ের মাঠে কি বলতে টেনে আনলে?

বিশ্বকর্মা: এই তোর দোষ। লক্ষ্মীর পাশে বসে তোর লক্ষ্মীর ওই চঞ্চলা ব্যামো ধরেছে। ধৈর্য বলে কিছু নেই।  হ্যাঁ রে, আগে তো পয়লা বৈশাখ বাঙালি রিকেট ব্যবসায়ীর পুজো নিতে একবার , আর দুগ্গা মায়ের সঙ্গে একবার আসতিস। বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি গণেশ চতুর্থীতেও আসছিস। মুম্বাইতে কি আর মন টানছে না?

গণেশ: কি করবো বলো,ভক্তের আবদার ।মুম্বাইতে ওরা চারদিন শহরে আমাকে  নিয়ে হইচই করে। তাই ওখানে তিনদিন থাকি। এখানে একদিন। তবে এবার আর মুম্বাই যাচ্ছি না। প্রথমত, সেখানে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। তাই সাহস পাচ্ছি না।আমার তো জানো, মুন্ডুটার জন্য মাস্ক পড়ার ঝামেলা। তাছাড়া সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা তাই নিয়ে সরগরম। এবার তাই কলকাতায় আছি পুরো চারদিন।

বিশ্বকর্মা:(দীর্ঘশ্বাস ফেলে) তুই ভাগ্যবান রে।আমার কপালটাই খারাপ। স্বর্গে আমি সেরা স্থপতি না ময়দানব সেরা , তাই নিয়ে বিতর্ক আজও থামলো না। বাংলায় ভালই সম্মান পেতাম। একসময় এখানে ছিল কত কলকারখানা।বাম সরকার আসায় ভাবলাম , মেহনতি মানুষের সরকার এসেছে। আমার কদর বাড়বে। আগে আসতাম হাতে হাতুড়ি নিয়ে।১৯৭৭সাল থেকে একটা কাস্তেও আনা শুরু করলাম। ওমা! কিছু বছরের মধ্যে দেখলাম বাংলায় কল কারখানা উঠে গেল।আমার পুজোর জৌলুসও কমে গেলো। হাতে একটা  ভোকাট্টা ঘুড়ি ধরিয়ে দিল। স্রেফ  টিকে গেল মদ আর মাংসের ঘ্যাট।

গণেশ:সম্মান যখন নেই , তো , আসো কেন? গুজরাটে তো যেতে পারো।

বিশ্বকর্মা: সে আর কি বলবো? ছেলেবেলার অভ্যেস।

গণেশ: আসলে কি বলতো? নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে দল পাকাতে হবে।এটা আমি আগেই বুঝেছিলাম। ইতিহাস দেখো। বিষ্ণুদেব দল বানালেন বৈষ্ণব। বাবা ভোলানাথ বানালেন শৈব। মাসি কালী দেবী বানালেন শাক্ত। আমিও তাই বানালাম   গাণপত্য। আর সূর্যদেব বানালেন সৌরপত্য । যদিও সে দলের সাইনবোর্ড উঠে গেছে। ব্রহ্মা,ইন্দ্র দল পাকাতে না পেরে  হটে গেছেন। তুমিও তাই।

বিশ্বকর্মা: দলের কথা যদি বলিস, তাহলে তো বলতে হয়,তোর  গাণপত্য দল তো জাতীয় দল নয়। আঞ্চলিক দল। তোর পপুলারিটি তো মহারাষ্ট্রে।বাংলায় তেমন কই? বাংলায় তো ওই ১ লা বৈশাখ ব্যবসায়ীদের কাছেই শুধু সেলিব্রেটি। বাকিটা তো হুজুগ। এইতো কিছু বছর আগে চামচে দুধ খেয়ে কি হুজুগ না বাঁধালি!!

গণেশ: মনে হচ্ছে,তোমার জেলাসি আমাকে নিয়ে?

বিশ্বকর্মা: (হেসে)কি বললি? জেলাসি? হা:,হা:হা:

হাসালি রে বালক তোর বাক্যের কৌশলে! আমি তোকে জেলাসি করবো? ওরে, আমি তোর বাপের বন্ধু। তোর বাপ ভোলা আমাকে বিশ্বদা বলে সম্মান করে। তুই কি জানিস ,যিশু জন্মানোর ৪০০ বছর আগে মানবগুহ্যসূত্রে তোকে বিঘ্নকারক দেবতা বলা হয়েছে? তোর দৃষ্টিতে মানুষের ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই। কুমারীর বিয়ে হয় না। বিবাহিতর সন্তান হয় না।সন্তানবতীর  সন্তান হয় না। রাজা রাজ্য হারায়। চাষির ঘরে ফসল ওঠে না। ব্যবসায়ীর লাভ হয় না

গণেশ: মোটেই নয়। এসব কায়েমী স্বার্থের চক্রান্ত।

বিশ্বকর্মা: তোর অভিযোগের তীর কি মনু ঋষির দিকে? তুই কি ব্রাহ্মণ্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিস? মনু ঋষি তো স্পষ্ট বলেছেন, তোকে যারা পুজো করে ,উচ্চবর্ণের শ্রাদ্ধ বাড়িতেও প্রবেশ নিষিদ্ধ। গণেশ তন্ত্রে বলা আছে, গজানন সূরা ও নারীতে আসক্ত।

গণেশ: সব মাছ পাঁক খায়, নাম হয় পাঁকাল মাছের। হ্যাঁ,আমি খেতে ভালোবাসি । সেতো আমার নাদুস নুদুস চেহারা দেখালেই বোঝা যায়।

বিশ্বকর্মা: সে না হয়,বুঝলাম। কিন্তু চারিত্রিক ব্যাপারটা? এই থলথলে চেহারা নিয়ে পাঁচ পাঁচটা বউ জোটে কীকরে?

গণেশ: আমার পাঁচ বউ? এসব অপপ্রচার। দুগ্গা পুজোয় সবাই কলা বউকে আমার বউ বলে ।এটা অপপ্রচার । সেতো নবপত্রিকা। যা দুগ্গা মায়ের প্রতীক।

মা আমাকে একটু বেশি ভালোবাসেন বলে আমার পাশে থাকেন। তাছাড়া সে অর্থে আমি তো শারীরিক প্রতিবন্ধী এই গজ মুণ্ডের জন্য।

বিশ্বকর্মা: বৌ এর ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিস? কেন পুষ্টি, তুষ্টি, রীদ্ধি, সিদ্ধি, শ্রী কি তোর বৌ এর নাম নয়? ভারতের মধ্যপ্রদেশে ইন্দোরে যে মন্দিরটা আছে সেখানে তোর মূর্তির পাশে তোর পাঁচ বৌএর মূর্তি নেই?

গণেশ: সেসব তো মানুষের কল্পনা?

বিশ্বকর্মা: ও:, তোর ওই ক্ষতিকর বাহন ইঁদুর সেটাও কি মানুষের কল্পনা? এই তো সেদিন ইঁদুরের ভাইরাসে পৃথিবীতে প্লেগ নামে কতবড় অতিমারী হয়ে গেল। করোনা তো নস্যি। হ্যামলীনের বাঁশি অলাকে কত পরিশ্রম করে দেশ থেকে ইঁদুর তাড়াতে হয়েছিল। গোলার ধান খেয়ে দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে।

গণেশ: বি পজেটিভ, বিশ্ব জ্যেঠু। ইঁদুরের ভালো দিকটাও দেখো। জানো না, ইঁদুর কত বড় সঞ্চয়ী। একটি একটি খাদ্যকণা সঞ্চয় করে রাখে দুর্দিনের জন্য।

বিশ্বকর্মা: যাই বলিস,তোর বাহন সিলেক্ট ঠিক হয়নি। লক্ষ্মী আর কার্তিকের বাহনের সঙ্গে সম্পর্কটাও ভালো না। পেঁচা আর ময়ূর তোর বাহনের জাত ভাইদের দেখলেই কপাৎ করে খেয়ে নেয়। মানুষের কাছে লক্ষ্মীপেঁচার কি কদর। ময়ূর তো আবার ভারতের জাতীয় পাখি। আহা। কি চলন। যেন রাজার বেটা। অঙ্গে কি রূপ।

গণেশ: ছুঁচ বলে চালুনি তোর কেন ফুটো? তোমার বাহনটা কি শুনি?

বিশ্বকর্মা: কেন? গজ। জীবনটাই তো দাবা খেলা।সেখানে গজ ছাড়া চলে? তাছাড়া ভারতে গজ রাজার বাহন। আসলে তোর মাথার ঠিক নেই। দল ফেঁদেছিস বটে, কিন্তু গোষ্ঠী কোন্দলে বাংলার শাসক দলও লজ্জা পাবে। ছ ছটা উপদল। উচ্ছিষ্ট গণপতি, মহাগণপতি, নবনীত গণপতি,হরিদ্রা গণপতি, স্বর্নগণপতি, সন্তান গণপতি।

গণেশ: এ আর নতুন কি?এদেশে কতগুলো কমিউনিস্ট পার্টি?

বিশ্বকর্মা: গণেশতন্ত্রে পরিষ্কার বলা আছে, তুই যেমন সুরারসিক,তেমন নারী সুধাপানেও মাস্টার। তোর ওই গোষ্ঠীর উচ্ছিষ্টপন্থীরা শুনেছি বিয়েতে বিশ্বাসী নয়। নারী পুরুষের সম্পর্ক যেন সেরকমই। নারী পুরুষ বহুগমন করতেই পারে।

গণেশ: এ সবেরই নাটের গুরু মনু ঋষি। তিনি ব্রাহ্মণ্য কালচারে আমাকে স্থান দেননি। কার্তিককে ক্ষত্রিয় বানিয়ে গলায় পৈতে দিয়েছেন। আমাকে শুদ্র বানিয়ে দিয়েছেন। নাগসর্প আমার পৈতে। শাস্ত্রে বলে, নাগপোবীত। আমি নাকি স্বাভাবিক সন্তান নই।১০মাসের আগেই জন্মে গেছি। তাই গায়ের রং রক্তবর্ণ। অর্থাৎ অপবিত্র। মহারাষ্ট্রের দলিতদের দেবতা আমি। ওরাই আমার চার হাতে দিয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও মোদক। কেউ কেউ আবার দেয় ডালিম।

বিশ্বকর্মা: মোদক মানে সিদ্ধির লাড্ডু।আর ডালিম?

লাল ফল। কামের প্রতীক।

গণেশ: দেখো বিশ্ব জ্যেঠু, তুমি আমার গুরুজন,তাই গাল দিতে পারি না। মোদক কোনও সিদ্ধির লাড্ডু নয়। মোদক কথাটি মারাঠি। কঙ্কানি ও গুজরাটি শব্দও মোদক। মালায়লাম ভাষায় কোজাকাথা। কর্নাটকে বলে মোদক কিম্বা কাদুবু। তামিলে মোদা কাম , তেলেগুতে কুদুমু। রেসিপিটা হলো চালের গুঁড়ো, নারকেল   কোড়া আর খেজুর গুড় দিয়ে তৈরি। দারুন খেতে একটা মিষ্টি।গণেশ চতুর্থীতে মহারাষ্ট্রে ২১ টি মোদক দিয়ে আমার পুজো হয়।

বিশ্বকর্মা: বাংলায় তো তোর কোনো মন্দির নেই।ব্যবসায়ীরা কালী মন্দিরে তোকে ঝুড়িতে বসিয়ে পুজো করতে নিয়ে যায় ।

গণেশ: সেতো তোমার বেলাও তাই। বাংলায় তোমার কোনও মন্দির আছে?

বিশ্বকর্মা: না,বাংলায় নেই বটে, তবে মহারাষ্ট্রে, পাঞ্জাবে,বিহারে আমার বেশ কয়েকটা মন্দির আছে।

গণেশ: আমার মন্দির কিন্তু ভারতের বহু জায়গায় আছে।এমনকি ভারতের বাইরেও আছে।

বিশ্বকর্মা: গণেশ, সংখ্যাধিক্য মানেই গনতন্ত্রের স্বার্থকতা নয়। মনে রাখবি, আমার একটা কৌলিন্য আছে। আমার পিতা শ্রী অষ্টবসুর অন্যতম প্রভাস। মা দেবগুরুর বোন যোগসিদ্ধা। ঋকবেদে স্পষ্ট বলা আছে, আমি সর্বদর্শী ভগবান। বাহু আর পদদ্বয় দিয়ে আমিই স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল নির্মাণ করেছি। আমিই সব দেবতাদের অস্ত্র নির্মাতা। আমার হাতেই তৈরি হাইটেক লঙ্কাপুরী, ইন্দ্রপ্রস্থ। ইঞ্জিনিয়ার নলবানরকে আমি পাঠিয়েছিলাম, রামচন্দ্রের কাছে সেতু নির্মাণের টিপস্ দিয়ে। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরও আমার বানানো। আমার জামাই সূর্যদেব। মেয়ে সংজ্ঞাকে তো ওঁর হাতেই তুলে দিয়েছি। তোর জন্ম? দূর্গাবৌমার গায়ের ময়লা থেকে।

গণেশ: বয়সের তো গাছ পাথর নেই। জাতপাতের রোগটা দেখছি রয়েই গেছে। ভুলে যাচ্ছ, আমি শুধু ভারতের দেবতা নই, গ্রিসে আর রোমে আমি পূজিত হতাম জুনো নামে। নেপাল, চিন, জাপান, মঙ্গোলিয়াতেও আমি পূজিত। নেপালের পশুপতি নাথ মন্দিরে বাবা ভোলানাথের মন্দিরে আমায় প্রতিষ্ঠা করেছেন সম্রাট অশোকের স্ত্রী চারুমোতি।

বিশ্বকর্মা: কিন্তু তুলসীকে নিয়ে তোর কেচ্ছাটা বল?

গণেশ :না , মানে, আসলে তুলসি ছিলেন রাধার সহচরী। রাধাকে এড়িয়ে তুলসী কৃষ্ণের সাথে একটু ইয়ে করতে গিয়ে রাধার চোখে ধরা পড়ে যান। তাই রাধার অভিশাপে মর্ত্যে রাজা ধর্মধ্বজের স্ত্রী মাধবীর গর্ভে জন্মান। ব্রম্ভার উপাসনা করে বিষ্ণুকে স্বামী পেতে চান। কিন্তু ব্রহ্মার ইচ্ছে ছিল, তুলসির বিয়ে হয় কৃষ্ণ সখা সুদামার সঙ্গে। সুদামা পরজন্মে জন্মেছিলেন অসুর শঙ্খচূড় হয়ে। বিষ্ণু কাকু বাবা ভোলানাথের সঙ্গে শঙ্খচূড়ের সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে স্বামীর ছদ্মবেশে গিয়ে তুলসির সঙ্গে দুষ্টু দুষ্টু করেন।

এরপর তুলসির কাছে কেস খান । বিরাট লাফরা। তুলসি হঠাৎ এরপর আমার প্রেমে পড়ে বিয়ে করতে চান। বাপ কাকার ঝামেলায় কে জড়ায়। আমি তাই দশ হাত দূরে। আমার  পুজোতে তখন থেকে তুলসি পাতা নিষিদ্ধ। অনেকক্ষন বক বক করলাম।এখনও কিন্তু বললে না ,বাইপাসের ধার থেকে এত দূরে কেন নিয়ে এলে।

বিশ্বকর্মা: নারে। তেমন কিছু নয়। লকডাউনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম দুদিন পর তুই তো ফিরে যাবি,আমাকে তো  ভাদ্র সংক্রান্তি পর্যন্ত একাই থাকতে হবে। তাই নিরিবিলিতে একটু সুখ দুঃখের কথা কইব বলে নিয়ে এলাম।

গণেশ: তাই বলো।যাই হোক।সাবধানে থেকো।আমি আমার হাসপাতালে বলে রাখব।পারলে একটা টেস্ট করিয়ে নিও।আমি বলে দেবো।তোমাকে ঢপ দিয়ে ভর্তি করে মোটা বিল ধরাবে না।

বিশ্বকর্মা: থ্যাংকু। তুইও সাবধানে থাকিস। স্বর্গে গিয়ে ১০টা দিন সেলফ কোয়ারেনটাইনে থাকিস। টা টা।

হঠাৎ এই কলমচির মনে হলো আমার মুখে কে যেন জলের ছিটে দিল। তাকিয়ে দেখি সন্ধে হয়ে গেছে।

ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম। তাহলে কি স্বপ্ন দেখছিলাম? নাকি দেবদর্শন হয়েছিল? আপনাদের কি মনে হয়?

হবে

No comments:

Post a Comment