সীতার জন্মদিন রাম ভক্তদের কাছেই অবহেলিত? (পর্ব_১) - Songoti

সীতার জন্মদিন রাম ভক্তদের কাছেই অবহেলিত? (পর্ব_১)

Share This
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়; গতকাল ১মে ছিল শ্রমিক দিবস। ছিল মান্না দে'র জন্মদিন। আজ সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ।বাঙালির কাছে রবীন্দ্রনাথের পর আর যদি কেউ থেকে থাকেন, তিনি সত্যজিৎ রায়। তার ওপর  গোদের ওপর বিষ  ফোঁড়া করোনা রহস্য। এই খবরের ভিড়ে হারিয়েছে একটি খবর। আজ বৈশাখী শুক্লা নবমী। পৌরাণিক মতে সীতার জন্মদিন।এখন রামায়ণ ইতিহাস না   মিথ এই নিয়ে বিতর্ক আছে।দেশের কোটি কোটি মানুষের বিশ্বাস রাম,সীতা, লক্ষ্মণ প্রতিটি ঐতিহাসিক চরিত্র।এই কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে  বিশেষ করে রামভক্তরা।রামের জন্মদিন চৈত্র মাসের রাম নবমী নিয়ে যতটা মেতে ওঠেন,সীতার জন্মদিন নিয়ে তার সিকি ভাগও নয়।
কারণ, পৃথিবীর সব দেশের মত ,সব ধর্মের মত নারী চিরকাল অবহেলিত। তাই সীতার জন্মদিন অবহেলিত।আর এই অবহেলা তো প্রতীকী।আসলে অবহেলিত তো ভারতীয় নারী।
সীতার জন্মদিন প্রসঙ্গে কিছু বলতে গেলে সীতার জন্ম প্রসঙ্গে কিছু বলতে হয়। তর্কের খাতিরে ধরা গেলো,সীতা বলে কেউ ছিলেন। যিনি পরবর্তী জীবনে রামচন্দ্রের স্ত্রী হন। তাহলে আলোচনার সহায় হবে পৌরাণিক কাহিনী।
পুরাণ বলছে, বৈকুণ্ঠের অধিপতি শ্রী বিষ্ণু নারদের অভিশাপে মানুষ হয়ে জন্মান।স্ত্রী লক্ষ্মী কি করেন? তিনি তো একা একা থাকতে পারবেন না। তিনিও তাই জন্ম নিলেন এই ধরাতলে। তবে সীতার জন্ম নিয়ে নানা মুনির নানা মত। মিথিলার জনক রাজা নাকি জমিতে লাঙ্গল চালাতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে খুঁজে পান। রাজা কেন চাষ করেন,বা মাটির নিচে কি করে একটা ছোট্ট মেয়ে   বেঁচে রইলো এসব প্রশ্ন তুলবেন না। আবার অদ্ভুত রামায়ণ বলছে, সীতা নাকি রাবণ ও মন্দদরী র কন্যা। ঘটনাচক্রে তাকে পৃথিবীদেবীর হাতে তুলে দিতে হয়।
আবার কোথাও বলা হলো, অপ্সরা রম্ভা আকাশপথে যাচ্ছিলেন,রাবণের ভ্রাতুষ্পুত্র নলকুবেরের ডাকে তাঁকে ইন্দ্রিয় সুখ দিতে। রাবণের নাকি ইচ্ছে হয় রম্ভাকে দেখে। রম্ভা বলেন, এখন ছেড়ে দিন, আমি কথা দিয়েছি এক জনকে। ফেরার পথে আপনার বাসনা পূর্ণ করব।রাবণের কি আর তর সয়?ফলে রম্ভার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ।ফলশ্রুতি রম্ভা নাকি গর্ভবতী হন। দাঁড়ান, আবার যেন প্রশ্ন করে বসবেন না রম্ভার এমন কত সন্তান ছিল?রম্ভা অভিশাপ দেন, ধর্ষণে উৎপন্ন কন্যাই রাবণের মৃত্যুর কারণ হবে । একই গপ্পো আছে আর একটি। সেখানে রাবণ নাকি বেদবতী নামে এক কন্যাকে ধর্ষণ করেন। সেই বেদবতী পরজন্মে সীতা হয়ে নাকি বদলা নেন।এখানেই শেষ নয়, আনন্দ রামায়ণ বলছে, রাজা পদ্মা ক্ষের কন্যা পদ্মাই নাকি পরবর্তী জন্মে সীতা হয়ে জন্মান। যাই হোক , মোটামুটি বোঝা গেলো সীতার জন্ম রহস্য। দিনটি নাকি ছিল বৈশাখী শুক্লা নবমী। লক্ষ্মী ঠাকুরুন তো স্বর্গসুখ ছেড়ে চলে এলেন মর্ত্যলোকে । কারণ তো একটাই ।স্বামীকে কাছে পাওয়া। হরধনু ভঙ্গ করে রাম সীতার মিলন তো হলো । কিন্তু তারপর? বিয়ের পর বারোটা বছর সীতা রাজসিক সুখ পান। বাল্মীকি রামায়ণ বলছে , বিয়ের সময় রামের বয়স ছিল তেরো।সীতার ছয়।
যদিও এই বয়স নিয়ে কিছু গোলমালও আছে। বাল্মীকি রামায়ণে বলা আছে ,সীতা ছাড়াও এক দিনে জনক রাজার তিন কন্যারও বিয়ে হয়। প্রত্যেকে যদি এক বছরের ছোট হয়, তাহলে সবচেয়ে ছোট মেয়ে শ্রুত কীর্তির বয়স ছিল তিন বছর?
এই প্রতিবেদন সীতার বয়স নিয়ে নয়, সীতা কতটা অবহেলিত তাই নিয়ে। সীতা সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা কি? স্বামীর অনুরাগী, পতিব্রতা। অথচ  সৎমা কৈ কেয়ীকে রাম বলেছিলেন, আমি নিজের আনন্দের জন্য ভাই ভরতকে রাজ্য,প্রাণ,কাঙ্খিত বস্তু, ঐশ্বর্য এমন কি সীতাকে পর্যন্ত দান করতে পারি।
অথচ সীতা রামের সঙ্গে বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্তেই অনড় ছিলেন, তাই নয়_বলেছিলেন, হে নরব্যাঘ্র তোমাকে বাদ দিয়ে আমার স্বর্গেও রুচি নেই। তোমার বিরহে রাম আমাকে প্রাণ ত্যাগ করতে হবে। তুমি পরিত্যাগ করলে আমার মৃত্যুই ভালো।

আবার সীতাকে যখন রাবণ হরণ করতে আসেন তখন রাবণকে ধিক্কার দিয়ে কি বলেন সেটা বলি সুকুমারী ভট্টাচার্যের ভাষায়। তুমি রামের প্রিয় বধূ কে চাইছো রাক্ষস। সাপের মুখ থেকে দাঁত নিতে চাইছ, কালকূট বিষ পান করে স্বস্তিতে চলে যেতে চাইছ,সূর্য ও চন্দ্রকে হাত দিয়ে হরণ করতে চাইছ,জ্বলন্ত আগুনকে বস্ত্র দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছ,,,,? সীতার এই অহংকার স্বামী রামকে নিয়ে।অথচ রাবণ বধের পর অশোক বনে বহু দিনের অদর্শনে কাতর সীতা ছুটে এসে স্বামীর কুশল জিজ্ঞাসা করলেন,জবাবে রাম বললেন,যুদ্ধ করে যে জয়লাভ করেছি সে তোমার জন্য নয় , ন ত্বদর্থং ময়া কৃত:।

এখানেই শেষ নয়। লঙ্কা বিজয়ের পর অশোক বন থেকে যখন সীতাকে   রথে অযোধ্যায় নিয়ে আসছেন বিভীষণ,তখন রাম বিভীষণ কে বললেন _রথে নয়,সীতাকে হাঁটিয়ে নিয়ে আসা হোক। যাতে উৎসাহী প্রজারা দেখতে পায় তাঁদের দেশের রাণীকে। সেই সীতার অপমানের শুরু।
লক্ষ্মণের মেঘনাদের শক্তি শেল  বাণবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিশ্চয়ই জানা আছে ? সেই  ঘটনায় বিলাপ করতে করতে রামচন্দ্র বলেন, মর্ত্যলোকে  খুঁজলে সীতার মত নারী আরও পাওয়া যাবে, কিন্তু লক্ষ্মণের মত সচিব ও যোদ্ধা ভ্রাতা কোথাও পাওয়া যাবে না।৬/৪৯/৪,৬/১০১/১৫(বাল্মীকির রাম ফিরে দেখা/সুকুমারী ভট্টাচার্য/প্রকাশক ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড)।সীতার অপমানের শেষ এখানেই নয়।আছে,আছে, আরও আছে।সীতা যে কদিন জীবিত ছিলেন ততদিন আর কত অপমানিত হন,সে কথা বলবো দ্বিতীয় পর্বে আগামীকাল।

No comments:

Post a Comment